কাউকে বলব না। কেন চোখ ভিজছে প্রতিদিন কষ্টের জলে।  
আমি কথা বলি জমাট বাঁধা বরফের সাথে। কথা বলি আনমনা
ঝর্ণার সাথে, বিরহী নদীর সাথে। কখনও কথা বলি জল শূণ্য
মরা খালের সাথে, ধূ ধূ মরুর সাথে। দেখি আমার বিরস
আঙ্গিনায় সাগর উন্মত্ত, তবু নেই পিপাসা মেটানোর জল।


কাউকে বলব না। কেন নির্জন আঁধারকে ভালবাসছি এখন।
আমি কথা বলি জোনাকীর সাথে, কথা বলি অন্যায় ভাবে কলঙ্কিত
করা চাঁদের সাথে। কথা বলি দূর আকাশে মিটি মিটি তারার সাথে।
কখনও কথা বলি ঝিঁ ঝিঁ পোকার সাথে, তেলহীন তেলাপোকার সাথে।
দেখি আমার নিঃসঙ্গ রাতের আড্ডায় সুখের তুলতুলে বিছানা, তবু
ঘুম নেই চোখে।


কাউকে বলব না। কেন ভাটি হেমন্তের উদাস করা খোলা
বিস্তৃত মাঠ কাছে ডাকছে আমায়। আমি কথা বলি ধানের
নাড়ার সাথে, কথা বলি গহীন পাথারে একলা দাঁড়িয়ে থাকা ঝাঁকড়া
গাছটির সাথে, কথা বলি শুকনো কঞ্চীর মাথায় বসে থাকা ফিঙ্গে
পাখিটির সাথে। কখনও কথা বলি মাটির সাথে, শিশির ভেজা
ঘাসের সাথে। দেখি আমার বুকের মধ্যে কত সতিত্বের গ্রাম, তবু
পাথার গলে দেখা দূর গ্রামটির জন্য মন কাঁদছে।


কাউকে বলব না। কেন নিঃশব্দ ক্ষরণে রক্তের বাঁধন অতীত
হয়ে যাচ্ছে কত সহজে। আমি কথা বলি নাড়ীর সাথে, জমাট বাঁধা
রক্তের সাথে। কথা বলি সঞ্চালিত ওমের সাথে, কথা বলি সুখ-দুঃখ
হাসি-কান্নার সাথে। কখনও কথা বলি আত্মিক গভীর সম্পর্কের সাথে,
কথা বলি এলোমেলো উত্থিত স্মৃতির সাথে। দেখি আমার মনের
উঠোনে লকলকে চিতার আগুন, নির্জনতার জীবন্ত অসংখ্য কবর।
তবু চোখ ভিজছে কেন কষ্টের জলে কাউকে বলব না!