রোদের শরীরটা কেমন নরম নরম লাগছে আজ।
আকাশে হাল্কা মেঘ কিন্তু তার মধ্যে কেমন পালাই পালাই ভাব।
আজ বোধহয় বৃষ্টি হবে না। ঘাসের ডগায় হাল্কা শিশিরের
আলগা আদর, শররতের সকাল বলে কথা। তাই আমার
বুকের মধ্যেও যেন খেলে যায় এক রাশ সাদা কাশফুলের শুভ্রতা।


সকাল তোমার সব সময় পছন্দের। তাইত ভাল লাগে তোমার-
সকালের সূর্য
         সকালের রোদ
                সকালের পাখি
                           সকালের গান
                                  সকালের ঘুম
                                         সকালের চা
সকালের সংবাদপত্র
আর ভাল লাগে সকালের নতুন এই শরতের সকাল।


কেন ভাল লাগে তা তুমি কখনও মুখ ফুটে বলতে চাওনি।
শরত মানেই তো শুভ্রতার আকাশ, কাশ ফুলের ফাঁক গলে
দেখা শুভ্রতার প্রকৃতি, শুভ্রতার কুয়াশা বৃষ্টি, শিশির কণা,
বালুচর, আর শুভ্র মনের বাতায়ন। যেখানে রবারবির ঘষাঘষি নেই  
অনাকাংখিত চিহ্ন অপসারণের। শরত যেন এক সাদা মনের
মানুষ প্রকৃতি নিঃস্বার্থ দ্যাতনা।  


মৃত্যুকে মেনে নিতে প্রায় সকলের কষ্ট হয়। তবুও তো মৃত্যু একদিন
পাকড়াও করবেই। এ জন্যই মৃত্যুকে মেনে নিয়ে সকলেই চায়
একটা স্বাভাবিক মৃত্যু বরন। আর মৃত্যু মানেই তো লাল রক্ত
প্রবাহে শূন্যতা আর শুভ্রতা। কাফনের কাপড় যেন শুভ্র জগতের
মধ্যে এক পুনঃজন্ম। তাই হয়ত কোমল শুভ্রতাকে তোমার এত
ভাল লাগে শরতের সকাল ভেবে।


আজ সকালে একদল সবুজ টিয়ে পাখি এসে কার্নিশে বসে
গান গেয়ে গেছে। ওদের লাল ঠোঁটে ফুটে ছিল শরতের প্রথম
সূর্যের আভা। সবুজ টিয়ে পাখির দল, সাদা মেঘ, কাশফুল,
সুনীল আকাশে শরত সকালের প্রথম সূর্য যেন পটে আঁকা
চির চেনা বাংলার জলরং ছবি। যে ছবির নদীর ঘাটে তোমার
শুভ্র বিছার কোমরে ঠাই নিয়েছে সিলভার কলসি।


আমি প্রত্যুষে খোলা পায়ে হেঁটে যাই নদীর দিকে, ভাঙ্গা খাড়া
পাড়ে গিয়ে বসি সূর্যের মুখোমুখি। দেখি নদীর জলে হিংস্র স্রোত
কেমন শান্ত হোয়ে এসেছে। এমন স্রোতের নদী আমার বড্ড
পছন্দের। শীর্ণতায় কেমন কষ্ট এসে ভর করতে চায়। কেননা
এমন স্রোতেই কেবল ভেসে আসতে পারে তোমার খোঁপা থেকে
খসে পড়া শুভ্র বেলিফুলের মালা। সে আশায় আমি আজও নদীর
উজান স্রোতে চেয়ে থাকি।


শুভ্রতার ভেতরেও যে এত রঙ খেলা করে তা জানাই হত না,
যদি না তুমি বিধবা নারী নিয়ে শুভ্র শাড়ির এত কথা বলতে
ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যা সাগরকে নিয়ে। ইশ্বর কি জেনেছিল ঈশ্বরও
নানান রংগের মাঝে শুভ্রতায় একাকার, যেখানে মৃত্যু নয়
আছে জীবনের শুরু, যেখানে বরষার কান্না নয় আছে শরতের
নম্র মায়া, যেখানে শীতের শুষ্কতা নয় আছে বসন্তের মাখামাখি,
আছে ভোরের শুভ্রতায় শরতের সকাল।