চলনা রে সই যাই দুজনে ঘুরে আসি বাঁশপাহাড়ি
তুই যদি যাস সঙ্গে আমার তবেই ভাড়া করবো গাড়ি।
আছিস কেন চুপটি করে কোথায় গেল দেখন হাসি
পছন্দ তোর পাহাড় নদী প্রিয় যেথায় বাজায় বাঁশি।


এবারে না বলিস না তুই, শুনেই হাসে ফুলকুমারী
বুঝে গেলাম চোখের ভাষায় উড়ছে যেন বকের সারি।
দুই ধারে বন ছুটছে গাড়ি রাস্তাটা বেশ আঁকাবাঁকা
আদিবাসী ললনারা ফিরছে ঘরে মাথায় ঝাঁকা।


ভুলাবেদা তামাজুড়ি ঢোল মাদলের বাদ্য শুনি
পালিস করা ঘরগুলো সব রমণীরা ভীষণ গুণী।
পাহাড় যেন ছুঁইছে আকাশ ঘন সবুজ চাদর গায়ে
রংবেরঙের কত পাখি তরুর শাখে ডাইনে বাঁয়ে।


পৌঁছে গেলাম ক্ষণেক পরে বাঁশপাহাড়ির শীর্ষদেশে
পাহাড় বেয়ে চকচকে পথ সূর্যালোকে ডাকছে হেসে।
কোনও কথা বলছ না যে লাগছে কেমন এবার বলো
ওই যে দেখো সামনে দোকান একটু কিছু খাইগে চলো।


‘কী খাবেন গো বাবুমশাই, আছে শুধু ঘুগনি মুড়ি
সাথে পেঁয়াজ ধনেপাতা, এ খাবারের নেইকো জুড়ি।
মহুল আছে- খাবেন বাবু, পরখ করুন একটু চেখে
এক গিলাসে অন্য ভুবন, আসুন ফিরে পাহাড় দেখে।

এদিক-ওদিক ঘুরছি বনে একটু জিরাই টিলার ’পরে
গাছের শাখা গা ছুঁয়ে যায় এতে কতো সোহাগ ঝরে।
ইচ্ছে করে বানাই কুটির এই অরণ্যের একটি কোণে
পশুপাখি আমরা দু’জন কাটাই জীবন সংগোপনে।


লালজলেতে কালকে যাবো মাত্র মাইল পাঁচেক দূরে
যখনতখন এই অরণ্যে বুনো হাতি বেড়ায় ঘুরে।
শুনেই সখী কাতর ভয়ে ‘যাচ্ছি কেন এমন স্পটে
ও’সব হাতি অবাধ্য খুব এখন যদি বিপদ ঘটে।’


এখান থেকে সিয়ারবিঁধা কাঁকড়ামোড়ে যাবে নাকি
পথ যদিও খাড়াই অতি না গিয়ে সই কেমনে থাকি।
কী অপরূপ দৃশ্য দেখ না এলে সব হতো মাটি
সূর্য এবার ডুবুডুবু গাড়ির দিকে জোরসে হাঁটি।


দ্রুতবেগে ছুটছে গাড়ি গাছের পাতা হাওয়ায় নড়ে
ফিরে এলাম বাঁশপাহাড়ি পিছনে সব রইলো পড়ে।
কুসুমদিঘির স্বচ্ছ জলে করছে সিনান বিধুমুখী
খসছে পাতা সোনাঝুরির মায়াবী রাত অপার সুখী।


রাত্রি বাড়ে আঁধার ঘনায় ঝিকিমিকি জোনাক জ্বলে
চোখের পাতায় নিদ জড়িয়ে শ্যামাঙ্গিনী পড়ল ঢলে।
বনবিতানে নিশিযাপন ঝরা পাতার খসখসানি
প্রভাত রবি ঘুম ভাঙালো কী অপরূপ আননখানি।