*     দৃঢ়চেতা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
               অজিত কুমার কর


  এ সাগর নয় নোনাজলের আগুনে ভরপুর
   প্রলয়ংকর ঊর্মিকে পাই অগ্নিবীণার সুর।
           কুসংস্কারের বেড়া পোড়ায়
           সুনামি দেয় ধাক্কা গোড়ায়
    বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলে এমন সমুদ্দুর
দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর প্রভাতের রোদ্দুর।


    অর্ণবে স্নান তৃপ্তিদায়ক নয়কো অপলাপ
   আপনি সাগর তবু বিলীন হয়নি মনস্তাপ।
              কী যন্ত্রণা নারীর বুকে
             সাগর তখন রয় না সুখে
    দুখমোচনে প্রয়াসী হয়, ধর্মান্ধদের চাপ
সাগর তখন ঝাঁপিয়ে পড়ে ধুইয়ে দিতে পাপ।


   শ্বেতবসনা কিশোরীদের কষ্ট হাহাকার
সহ্য করা যায় না এসব সমাজ নির্বিকার।
         এগিয়ে গেলেন বিদ্যাসাগর
            যুক্তিগুলো বিধিনির্ভর
    বিধবারা কেন হবে লাঞ্ছনার শিকার
আবার পাবে নতুন জীবন পরবে ফুলহার।


   লেখনীতে বেরিয়ে এলো 'বর্ণপরিচয়'
শিক্ষাদীক্ষা রুখে দেবে জাতির অবক্ষয়।
          'বোধোদয়'-এর মর্মবাণী
             শুদ্ধ করে হৃদয়খানি
   বঙ্গবুকে ঘটল তখন নবীন সূর্যোদয়
   বিশ্বমাঝে বাঙালিরা রাখল পরিচয়।


   শেষ জীবনে কার্মাটাড়ে যন্ত্রণা এমন
মায়ের আশিস তাঁর জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ ধন।
               বঙ্গ থেকে বহুদূরে
             মাদল শুনে হৃদয় পূরে
  মৃত্যুশয্যায় জন্মদাত্রী চায়নি যেতে মন
     শপথভঙ্গ হবার ভয়ে বিব্রত তখন।


শেষ প্রহরে শয্যাপাশে কে রেখেছে ফুল
শেফালিকার গন্ধে হৃদয় হয়েছে আকুল।
           পুত্র-হাতে বিদায় অর্ঘ্য
          দিশা দেবে কোথায় স্বর্গ
   স্থান পেল না শ্রীচরণে স্বপুত্র ব্যাকুল
   প্রায়শ্চিত্ত কেমনে হবে অমর্ষীয় ভুল।


     বিদ্যাসাগর বজ্রকঠিন সদা উচ্চ শির
    মহৎ কর্মে সবার আগে ভূধরসম ধীর।
            অসম্মানের যোগ্য জবাব
             ত্বরিতে পায় শ্বেতাঙ্গসাব
সেই জ্বালাতে কাতর সাহেব ঔদ্ধত্য চৌচির
  ভারতমাতার গর্বের ধন বিদ্যাসাগর বীর।


ক্ষণজন্মা এমন মানুষ কোথায় পাব আর
  দেশবাসীর মঙ্গলার্থে সময় কাটে যার।
            প্রাধান্য পায় অগ্রগতি
             চক্ষুজুড়ে দিব্যজ্যোতি
নারী-পুরুষ সবাই পাবে সমানাধিকার
মালিন্যহীন স্ফটিকস্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর।