*
একই রকম দেখতে ওরা শ্যাম-সরমার দুই মেয়ে
রানি-বাণীর সময় কাটে কাজ করে আর গান গেয়ে।
বেড়াতে যায় মাঝে মাঝে
দু'বোনে বেশ শোভন সাজে
মা বসে রয় ঘরের সামনে কখন ফেরে পথ চেয়ে।
বাজার থেকে ফিরছে ওরা বৃদ্ধ বামন বিপদে
বিশাল লম্বা সাদা দাড়ি টানছে কষে শ্বাপদে।
ব্যাগের ভিতর কাঁচি ছিল
ঘচাৎ করে কেটে দিল
বৃদ্ধ ভীষণ ক্ষেপে বলে 'ডেকেছি কি আপদে?'
'বড় সাধের শুভ্র দাড়ি এমন করে কেউ কাটে!
কেমন করে মুখ দেখাবো ঘরে বাইরে পথ ঘাটে?'
মৌন দুজন সহোদরা
ফিরল বাড়ি এবার ত্বরা
তখনো মা তেমনি বসে গাছের নীচে সেই খাটে।
কদিন পরে ফিরছে ওরা নিকটবর্তী গ্রাম থেকে
আজব কান্ড ঝুলছে বুড়ো গোঁফ দাড়িতে মুখ ঢেকে।
গাছের ডালে আটকে গেছে
করুণ দশা, বামন বেঁচে
কেটে দিতে রেহাই পেল ওরাও অবাক এই দেখে।
প্রশংসা নয়, জুটলো ওদের একই রকম তিরস্কার
'কেন তোমরা করলে এ কাজ,' কোনো জবাব দেয়নি তার।
যথারীতি নীরব থাকে
আঁচল দিয়ে আনন ঢাকে
কৌতুহলী হচ্ছে ওরা আজব দৃশ্য, কী ব্যাপার!
প্রাতঃভ্রমণ করছে দু'বোন সামনে আবার সেই বামন
আটকে গেছে চেনের সাথে লম্বা দাড়ি তার এখন।
হ্যাঁচকাটানে কাজ হলো না
কাটা ছাড়া পথ পেলো না
বকাঝকা গা'য় মাখেনি সাঙ্গ হলো আজ ভ্রমণ।
অবিশ্বাস্য এ ঘটনা এক ঘটতে দেখে রুদ্ধবাক
চোখের সামনে স্বর্গপরি ডাকছে কাছে লাগলো তাক।
'পরীক্ষাতে পাশ করেছ
আমার কাছে বর পেয়েছে
রাজবাড়িতে বিয়ের বাসর ঘুরবে দুজন সপ্ত পাক।'
ওদের হাতে ধরিয়ে দিল সুগন্ধি দুই পারিজাত
শুঁকবে এ' ফুল রাজার সামনে করবে যখন দৃষ্টিপাত।
বলেই পরি রায় মিলিয়ে
ওরা দুজন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে
ক্ষণেক পরে বাড়ি ফিরে মা-বাবাকে প্রণিপাত।
রাজপ্রাসাদে হাজির হল ওরা দুজন আনন্দে
রাজা রানি পৌঁছে গেল মোহিত হল সুগন্ধে।
যখন দু'বোন শুঁকল ও' ফুল
রাজকুমারদ্বয় ভরালো কুল
রাজা-রানি আত্মহারা বিহ্বল দুজন এ' ধন্ধে।
নিঃসন্তান রাজা রানির তুমুল হর্ষ প্রাসাদে
পুত্র পেল বউমা এলো দীর্ঘ বারো সাল বাদে।
উঠল মেতে মহোৎসবে
বাজলো সানাই সগৌরবে
রাজ্যবাসী তৃপ্ত হলো ভুরিভোজের আস্বাদে।
© অজিত কুমার কর