রূপসি অ্যারিয়েল


সপ্ত পরির পিতা ট্রাইটন এখন সিংহাসনে
অতল জলের রাজা যে সে ভাবছে কী আনমনে।সেবাস্টিয়ান সদাই সাথি পাশে পাশেই থাকে
জলপরিদের আসার জন্য নিজের ঘরে ডাকে।
নৃত্য-ঘরের উদ্বোধনে কতই মজা হবে
সবাই যদি সাজাও ও'ঘর লাগবে দারুণ তবে।
গীত রচনায় সেবাস্টিয়ান, বলামাত্র রাজি
কলিদুয়েক গেয়েই দিল খুশিতে ডিগবাজি।


আমন্ত্রণের পত্র বিলি করবে অ্যাকুয়াটা
রসুইখানার তদারকি অ্যারিস্টর গা'য় সাঁটা।
অন্য চিন্তা অ্যারিয়েলের শুনছে না মন দিয়ে
ডাঙার মানুষ কেমন নাচে সঙ্গীসাথি নিয়ে।
তীক্ষ্ণস্বরে বলল বাবা শুনছো না তো কথা
স্বপ্নভঙ্গ হয়ে গেল, করেছে অন্যথা।
'আর একবার বলো বাবা', মধুর কন্ঠে বলে
সাজানোর ভার তোমার ওপর হয় যেন ঝলমলে।


তক্ষুনি সে চলে গেল প্রাসাদের বলরুমে
কী কী চারা লাগবে সেথা, মিলেবে এ' মরশুমে। এরিয়েলের ব্যাগের ভিতর অনেক ঝিনুক আছে
সেবাস্টিয়ান ডাকল তাঁরে, এসো আমার কাছে।
ঝনক ঝনক শব্দ দিল গানটা জমে যাবে
অতিথিরা ওটা শুনে খুব আনন্দ পাবে।
তাঁর কথা না শুনে শুধায় মিলবে কোথায় চারা? সেবাস্টিয়ান বলল তাঁরে, কীসে আত্মহারা।


লালচে পাথর নীল কোরালের গায়ে আছে লেগে
অ্যারিয়েলের তর সহে না ঝাঁপাল তীরবেগে।
পুচ্ছটি ওর লাগল গিয়ে অক্টোপাশের পায়ে
সে তো তখন মুক্তামালা জড়ায় থামের গায়ে।
ছিটকে গেল মুক্তাদানা, পাক খেয়ো না অত
সকাল থেকে ঘর সাজাতে কাজ করেছি কত।
মুক্তাদানা ভাসছে জলে ধরল দুজন মিলে
লাগবে ভালো দুজন মিলে ফের লাগিয়ে দিলে।


কাজটা সেরে এগিয়ে চলে, সখীর সাথে দেখা
বন্ধুটি তাঁর ফ্লাউন্ডার মাছ গায়ে হলুদ রেখা।
দুজন মিলে এবারে যায় প্লামশেলের কাছে।
'ঠিকানাটা আমায় বলো', তোমার জানা আছে?
ভুলোভালা অ্যারিয়েলের মনে কি আর থাকে
আমতা আমতা করে বলে, নীল পাথরের ফাঁকে ।সেখানে না পাওয়া গেলে পাবে কোরাল বুকে
নিজের ভুলটা বুঝতে পারে, কপালে হাত ঠুকে।


হদিশ তাঁরে দিয়েছিল গীতিকার কাঁকড়াজি
অবলীলায় গেছে ভুলে অ্যারিয়েল তা আজি।
দেখ দেখ ওই ওদিকে কত হলুদ তারা
ফ্লাউন্ডারের চেঁচামেচি সবাই হেসে সারা।
অ্যারিয়েল যেই হাত দিতে যায় কড়া ধমক খেল
'হাত দিয়ো না আমার গায়ে'', নিষেধ শুনতে পেল।
অ্যারিয়েল আর ফ্লাউন্ডার মাছ ছিঠকে গেল সরে
শুনতে পেল বলছে তাঁরা, ' ছুঁলেই যেতে মরে'।


ওরা হল সী-অ্যানিমন দেখতে ফুলের মতো
হুল ফোটালে দেহের উপর হত গভীর ক্ষত।
আঘাত দিতে চাইনি আদৌ, বলছি যা তা শোনো
বলরুমে আজ রাত্রে পার্টি, শত্রুতা নেই কোনো।
সব অ্যানিমন যেতে রাজি পৌঁছে যাবে রাতে
কথার খেলাপ হবে নাকো, সন্দেহ নেই তাতে। অ্যারিয়েল আর ফাউন্ডার মাছ এবার বিদায় নিল
নৃত্যশালার ঠিকানাটা ওদের দিয়ে দিল।


একটু পরে পড়লে চোখে আরও অনেক চারা
আসলে তা একটা স্কুইড গা-টি দিল নাড়া।
ক্ষিপ্ত স্কুইড দিল ছুঁড়ে বালতিখানেক কালি
ঢেকে গেল অন্ধকারে রইল না আর খালি।
অ্যারিয়েলের টনক নড়ে এ তো তাঁরই ত্রুটি
সতর্ক সে হয়নি কেন, পিছোয়ে গুটিগুটি।
আপন মনে ভাবতে লাগে সে নয় মনোযোগী
তাঁরই দোষে পণ্ড হলো, এখন ভুক্তভোগী।


বিপদগুলো কেটে গেল সব আয়োজন সারা
নৃত্যগীতে উঠল জমে সবাই আত্মহারা।
মুক্তা ঝিনুক ঝনঝনাঝন কী সুমধুর গীতি
অ্যালিয়েলের জন্য হল, সেবাস্টির স্বীকৃতি।
অ্যানিমনের উপস্থিতি, চমক সবার চোখে
ওদের পেয়ে সবাই খুশি, এ কোন স্বর্গলোকে!
প্রশংসাতে ভরিয়ে দিল জলপরিদের পিতা
কত আদর সোহাগ চুমা ভুলতে পারে কি তা।


একনিষ্ঠ হতে হবে সকল প্রকার কাজে
অ্যারিয়েলের বিমল হাসি, মিশ্রিত তা লাজে।


@আজিত কুমার কর