৷৷  মাটি ৷৷  


মাটির মতন আর কি আছে খাঁটি?
সে যে মায়ের আঁচল,সে যে শীতল পাটি।
মাটি,সে যে জন্মভূমি,জীবন্ত মানুষের স্বর্গ
সুখে বাস করি হেথা সবে,নিয়ে পরিবারবর্গ।
এ যে মানুষে মানুষে ভালবাসার মর্ত লোক
এ মাটির কোলই,মানুষের চিরনিদ্রার গোলক।
এ যে হামাগুড়ি দেয়া উঠোন,এ যে খেলার মাঠ,
এ যে দিগন্ত জোড়া প্রান্তর,এ যে শহর বন্দর হাট।
এ যে সবুজ ঘাসের গালিচা বিছানো লম্বা ড্রয়িং
নাচি হেথা সবে কৈশরে,তাক্ ধিনা ধিন ধিন।
যৌবনে বাসর সাজাই এ মাটিতেই মহানন্দে মোরা
এ মাটির তরে কাজ করে,নাম করি জগৎ জোড়া।
জ্ঞান বিজ্ঞান ধর্ম কর্ম সবই করি এ মাটিতে বসি
ভালবেসে দেয় আলো দেয় প্রাণ হেথা,রবি শশী।
হেথা হীরা জহরত মণি মানিক্য স্বর্ণ রৌপ্য মোহর
তবুও যে মেটে না আশ,কাটে না মনের ঘোর।
কোথা হতে আসে না কিছু হেথা,সবই এ মাটির ফসল
বানাই যত খাদে অখাদে,গড়ি যত আসল নকল।
খাদ্য বস্ত্র ঔষধ পত্র ভোগ বিলাসের যত সব
খুঁজে নেই মাটি বুক থেকে,তবু করি কত কলোরব!
আমির ওমরাহ বাদশা ফকির দরবেশ ফতুয়াবাজ
এ মাটির বুকে প্রতাপে,হুজুগে সকলেই করে রাজ।
এ মাটিতে বাস করে লোভ করে ইহকাল পরকালে
মনের ক্ষুধায় কষ্ট কেনে,ধুঁকে ধুঁকে মরে অকালে।
এ মাটি যে ফসলের মাঠ,কৃষান কৃষাণীর মধুর হাসি
এ যে গোচারণ ভূমি যেথা বাজে রাখালের বাঁশি।
এ মাটিতে জলে থই থই,বিল ঝিল প্রসারিত হাওড়
নদী নালা সাগর মহাসাগর,এখানেই যে ছোট্ট বাওড়।
এ যে পাখীর কাকলিতে মুখরিত বন বনানী
এ মাটিতেই জমা আমাদের প্রাণ,সুমিষ্ট পানি।
এখানে প্রাণি আর বৃক্ষরাজি থাকে বন্ধুর মত
এ মাটির অদেখা জগতে,কত প্রাণ খেলে অবিরত!
এ মাটিতে পাহাড়েরা মাথা উঁচু করে আকাশের পাণে,
মেঘেদের তারা কাছে ডাকে,মমতায় কোলে টানে।
এ মাটিতে প্রেম প্রেম খেলা চলে,চলে ভালবাসা
এ মাটিতেই  ফল হয়ে ফলে,মনের সকল আশা।
এ মাটির বুকে গড়ি ইমারত দালান অট্টালিকা
ফুলের বাগানে প্রজাপতি মৌমাছি,ফোটে মালবিকা।
এ মাটিতেই দেশ মহাদেশ,এ মাটিতেই গড়া ধরা
সব নেয় তবু বিবেকহীনেরা,ধরাকে জ্ঞান করে সরা।
মাটি যে খাঁটি, বোবার মত নিরবে সয় সকল যাতনা
তার বুকে লাঙল টানি,মেটাই মোদের বাসনা।
তার বুকের লুকানো খনি খুঁচে খুঁচে করি বার
নলকুপে টেনে আনি তাজা তাজা বুকের রক্ত তার।
খানাখন্দ পুকুর দীঘি, কাটি মাটিতে নিষ্ঠুর হাতে
লক্ষ টনের ইমারতের বোঝা,দেই তুলে তার মাথে।
মাটি নিশ্চুপ মায়ের মত,যেমন দেখি নিত্য
এ মাটির গান গেয়ে গেয়ে ভরে যায় খুশিতে চিত্ত।
মাটি খাঁটি সবার সেরা,মাটি মোদের মা,
বিশ্ব ভুবনে মায়ের কভু,হয় না তুলনা।


-পরিমল কুমার হাওলাদার
১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
রাতে।