তোমার আমার মাঝে কত মাইল-কিলোমিটারের দূরত্ব তবুও আমরা কত কাছে! যেমনটা চাঁদের সাথে আমার সম্পর্ক, চাইলেই দেখতে পাই, কথা বলতে পারি, শুধু ছুঁয়ে দেখার সামর্থ্য নেই।
অথচ যে আমার সাথে রোজ রাতে বিছানার চাদর ভাগ করে তার সাথে মনে যোজন ক্রোশের ব্যবধান!
এই যে আমাদের মধ্যে যে অমোঘ আকর্ষণ এটাই হয়তো ভালোবাসা।


তোমাকে কিছু বলার আগেই কিংবা বলতে পারো অ বলতেই আমার অজস্র চাওয়া পাওয়া তোমার জানা হয়ে যায়,
কিন্তু যার সাথে সংসার নামক নাটকটা নিপুণ দক্ষতায় অভিনয় করে চলেছি তাকে সবিস্তারে বলার পরও আমার চাওয়া পাওয়ারা মুখ হা করে তাকিয়ে থাকে।
এই যে আমার মন পড়ার যে ঐশ্বরিক ক্ষমতা তোমার আছে এর নামই হয়তো ভালোবাসা।


আমার তোমাকে বলতে হয় না ভালোবাসি, তুমি বুঝে নাও; তোমার বিশ্বাস তোমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করে, তোমার প্রেমের পাঠের একান্ত বাধ্যগত ছাত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ করায় আমাকে। আমি মন দিয়ে তোমাকে অধ্যয়ন করি।
অথচ এই আমিই, যে কিনা একটি বারও মনের কথাটি তোমার সামনে বলি না মুখ ফুটে সে আমিই কিনা ভালোবাসি ভালোবাসি বলে মুখে ফেনা তুলে দিগ্বিদিক  আলোড়ন করি সংসারের ঘৃণ্য মিথ্যের চৌকাঠ মাড়িয়ে। আওড়িয়ে যাই নাটকের সংলাপ!


এ সমাজ আমাকে ভালোবাসার অধিকার দেয়নি,
এ সমাজ আমাকে মিথ্যের অভিনয়ে দক্ষ করেছে,
মাঝে মাঝে ভাবি কান চলচিত্র উৎসবে যদি ছলনার, প্রতারণার, মিথ্যে অভিনয়ের জন্য পুরস্কার দিত তবে আমি লাল গালিচায় হাঁটতাম সহস্রবার।


ভালোবাসা লুকোতে গিয়ে আমি নিজেকে লুকিয়ে ফেলেছি, মনে আছে তোমাকে বলার জন্য হাজারটা ভালোবাসার পঙক্তির পাণ্ডুলিপি সিন্দুকে রেখেছিলাম।  
ভেবেছিলাম একদিন ফুরসৎ করে তোমার সামনে হাঁটু গেড়ে উথান চিবুকে ওষ্ঠ অধরের মলিন কম্পনে শোনাবো সেসব প্রেমালিপি।
কিন্তু সেই সিন্দুকের চাবিখানা যে এই সংসার নামক ভয়ংকর দৈত্য গিলে খাবে বুঝতেই পারিনি।


আমার ভালোবাসা দৈত্যের নিঃসৃত বিষে বিষাক্ত!
এ হৃদয়ে এখন আর ভালোবাসা নেই।
তবুও জেনো এই আমি তোমাকেই ভালোবেসেছিলাম।
অভিনয়ের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আমি চিৎকার করে বলবো আমি এই সংসারকে ভালোবাসিনি, এ তোমাদের আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক বোঝা! আমি তো শুধু তাকেই ভালোবাসি যার সাথে আমার মনের দূরত্ব সূচাগ্রসম। প্রিয় সে তুমি ছাড়া আর কেউই নয়!