শিকড়ে উন্নত জাতের সার পাওয়া লাউয়ের ডগার মতো
আমার বয়সটাও কবে যে তরতর করে বেড়ে গেল বুঝতেই পারলাম না।
শৈশব কৈশোর ফেলে তারুণ্যের পাটও চুকিয়ে প্রৌঢ়ত্বের শেষ ভাগে উপনীত হয়েছি।
এইতো আর বছর কয়েক গেলেই আদমশুমারীর খাতায় বৃদ্ধ বলে পরিগনিত হবো।
এইতো সেদিন জন্ম নেওয়া আমার ছেলেটা কত্তো বড় হয়ে গেল চোখের পলকে!
কতো প্রাণচঞ্চল, উচ্ছ্বল ছেলেটা।
ইদানীং তার বেশ কয়েকটা মেয়েবন্ধু হয়েছে; সেদিন বললো ঋধূকে তার ভীষণ পছন্দ।
আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়েছিলাম; আমি যেন নিজের চোখে আমিকেই দেখছি।
শীতের কোনো এক কুহু কাকলিতে ভরপুর সকালে বাবার কাছে বলেছিলাম ওঁর কথা।
বাবা আমার আমি বাবার মতো ছিলেন না;
প্রাতঃস্নানের জন্য উনুনের কড়া আঁচে টগবগিয়ে ফুটতে থাকা জলরাশির ন্যায় বাবার করোটির মধ্যে সফেদ ঘিলু টগবগ করতে লাগলো।
জল অত্যাধিক গরম হলে যেমনটা কম্পনের সৃষ্টি হয় বাবার দুপাটি দাঁতেও তাই হলো।
ঠকঠক করে কাঁপছে দুটি অধর। এই বুঝি ভিসুভিয়াসের লাভায় আমার সমাধি রচিত হবে।
হয়েছিলও তাই!
দুটি নতুন পথ আমার সামনে উন্মোচিত হলো।
হয় ঘরে ঢোকো নয় বের হও তল্পিতল্পা সহকারে।
আমি দ্বিতীয়টি বেছে নিলাম!
এরপর বছর ঘুরে সুখের নদী সাঁতরে পার হলেম বেশ কয়েকটি বছর, বাবু এলো, বড়ো হলো।
মাঝ থেকে ফিনিক্সের মতো ফুড়ুৎ করে উড়াল দিল যার জন্যে ত্যাজ্য হয়েছিলাম!
এসবের মধ্যে কবে যে জীবনটা লাউয়ের ডগা হলো বুঝতেই পারলাম না।
সেদিনের সাহসী আমি যখন বাবুর বেশে আমার সামনে উপস্থিত হয়ে বলল ঋধূর কথা, কেন যেন আমার মস্তিষ্ক ভিসুভিয়াস হলো না, হলো হীমাবৃত মাউন্ট ফুজি!
হেসে বললাম বেশ তো নিয়ে আয় একদিন!
লোক মুখে শুনেছি সেদিনের পর বাবা কখনো কারো বিয়েতে যাননি, পুত্রশোকে নিরবে কেঁদেছেন অগণিত বিনিদ্র রজনী।
আমি বাবার মতো ভুল কীভাবে করি? সময় যে আমাকে সে শিক্ষা দেয়নি।
আহা সময়, আহা সময়, আহা সময়।