ডাকনাম জুয়েল, সতের কি উনিশ।
পুরো নামটি জুয়েল, মোল্লা! না কি রহমান!
কে রাখে আর মনে।
অব্যবহৃত চাকার হাওয়ার মতো অব্যবহৃত নাম;
ধীরে ধীরে অন্তরালে চলে যায়।
পেশায় নাপিত, হেয়ার ড্রেসার নয়।
পাড়ার ছেলেরা বা দলীয় চামচারা;
পয়সা চাইলে বলে, “খাতায় লিখে রাখ”-
কত কিছু যে লেখা আছে সে খাতায়;
একদিন ঠিকই শোধ হবে সুদে-মূলে।
এই অসমদর্শী, আত্মকেন্দ্রিক, কলঙ্কিত সমাজে জুয়েল
এক জলজলে রাজ সাক্ষী।
বাবা ইট ভাঁটায় পেশাগত দূর্ঘটনায় আজ রিকসা চালাই।
মা নেই।  ছোট্ট বোন প্রাইমারী ছাত্রী।
জুয়েল কথা বলতে করে একটুকু তোতলামি;
ধনীর দুলালের তোতলামি, আদরের,
অভাগার তোতলামি, পাগলের।
দু বেলার খাবারটা কোনরকমে তিনটি প্রাণীর-
মুখ চাওয়াচাওয়ি করে খাওয়া মানে, গেলা হয়ে যায়।
অভাবের গাছ যেন বেড়েই চলেছে, তাতে-
পোকাও লাগে না, ঝড়েও ভাঙে না।
একদা পাশের বাড়ির মাংস রান্নার ঘ্রাণে-
জুয়েলদের বাড়িও ম ম করে ওঠে।
আপন ভুঁড়ি বেড়েই চলে, নানান ভুরি ভোজ,
পাশের বাড়ি খেলো কি না, কে রাখে তার খোঁজ।
বোনটি বলে উঠলো,
“উরা গোচতো আঁদচি, না রে ভাই? কি সুন্দর বাস্না!”
জুয়েল হাসলো, নাকি কাঁদলো; বোঝা খুবই শক্ত।
তার ইচ্ছে হলো, এখনই মাংস কিনে আনে।
নুনের আগেই পান্তা ফুরোই, মাংস আসে কেমনে।
সেই আরব থেকে জবাই করা দুম্বা এলো, চেয়ারম্যান ঘরে;
গরীব দুঃখীর তরে।
বোনের কথা বারে বারে মনে পড়ে।
চেয়ারম্যান জানিয়ে দিল সাফ;
মেম্বার -ই পায়নি, কি দিব আর তোরে।
ফিরলো জুয়েল বেজায় খুশি, ভাবছে মনে মনে,
“তাইলি আমি বলনুক বটে”
সে পণ করিল মনে, বিদেশ যাবে চলে।
অর্ধেক বাড়ি বেচতে হবে, মাংস খেতে হলে।
বাপের সাথে সে কি ঝগড়া-মারামারি-গণ্ডগোল,
তিনদিন ধরে ফিরলো না সে ঘরে।
অবশেষে, সেটাই হলো, জুয়েল গেল বিদেশ চলে।
এখন সে বোনের কাছে ফোন করে করে বলে,
“এদা নে ট্যাকা পাটালাম, শুডু গোচ্চ খাবি, শুডু গোচ্চ।”


শব্দ ব্যাখ্যা:
আঁদচি – রান্না করছে
বাস্না – সুগন্ধ
বলনুক – বড়লোক
গোচ্চ – গোশতো
এদা নে – এই নে
শুডু – শুধু