ভোর হয় না এখানে মোরগের ডাকে,
কৃষ্ণচূড়া ফোটে না জানালার পাশে।
ঘুম ভাঙে রোবটের মতো, এলার্মের শব্দে।
আয়নার ভেতর মুখটা নিজের মনে হয় না।
মাথায় হাতুড়ির বাড়ি মেরে কে যেন বলে,
আর কতো? অনেক তো হলো।
তবু জুতো গলিয়ে নামতে হয় বরফে,
বুঝিয়ে বলতে হয় "আমি ভালো আছি",
যদিও বুকের ভেতর কে যেন কাঁদে বলে।
ভালো নেই , এটা ভালো থাকা নয়,
তুমি মিথ্যাবাদী।

বাজারে গেলে সবজির দাম মাপে ইউরোয়,
হঠাৎ মনে পড়ে—
"এটা একটু কম কইর‌্যা দাও না ভাই…"
এই একটুখানি ভাষার জন্য
মনে হয় পুরো শহরটা অনাথ,
কেউ কারো নয়, আমি এতিম এই শহরে,
নিজেকে মনে হয় বেমানান আগন্তুক।

ফোনে মা জিজ্ঞেস করে,
"খেতে পারছিস তো ঠিকঠাক?"
আমি হাসি, বলি—"হ্যাঁ রে, চিন্তা করো না,"
আবার মা বলে,"তোর ভাইয়ের টাকা লাগবে,
ওর নাকি একটা বাইক পছন্দ হয়েছে।"
ফোন কেটে যায়, কিন্তু আমি ছুটি।
আমি অচেনা শহরে,
অচেনা মানুষের ভিড়ে বাইকের রসদ যোগাতে।

বন্ধুরা ছবি দেয় উৎসবের নতুন পাঞ্জাবিতে,
আমার উৎসব কাটে স্টোরে ডবল শিফটে।
একেকটা উৎসব এসে
মনে করায় আমি দূরে, অনেক দূরে।

রাস্তার পাশের ঝাউগাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি,
নিজেকেই চিনতে পারি না—
নতুন ভাষা, নতুন মুখ,
সবকিছুতেই যেন কিছু একটা হারিয়ে গেছে।

তবু হারাই না আমি,
আমার ঘুমের ভেতর জেগে থাকে
একটা আকাশ— সাদা-মেঘে ঢাকা,
একটা নদী— যার নাম আমি স্বপ্নে বলি,
একটা শব্দ— ‘ফিরবো’,
যেটা প্রতিদিন নিজের ভেতর উচ্চারণ করি।

ভালোবাসা এখানে রুটির মতো মোড়ানো,
কোনো মায়ের চোখের জল নেই,
নেই সন্ধ্যার পর চায়ের কাপে দম।
তবু এই শূন্যতার মধ্যেও
আমি পকেটের ভেতর করে রাখি কিছু শব্দ—
‘আয়’, ‘বস’, ‘খাস কি?’,
এইসব শব্দই আমার পাসপোর্ট হয়ে গেছে।

দেশ ছেড়ে দেশ গড়েছি—
তবু জানি, আমার ঘর এখনো সেখানে,
যেখানে মেঘ নামলে মা ভিজে পড়ে বারান্দায়,
আর বলে—
"মনা,,রে,,,, ফোন দে তো, হুট করে মনে পড়তাছে…”

এই পড়ে যাওয়া মনে পড়ার ভেতর
আমি জেগে থাকি,
আমি বাঁচি,
আমি প্রবাসী।