সাত ভাই ও চম্পা প্রতিদিন খেলা করে
খড়ের ঘরের ছোট চালে নানা মধুর স্বরে ৷
এমনি করেই চলে ওদের প্রত্যহের মেলা,
বোনকে নিয়ে জমত ওদের মজার খেলা ৷
কথা ওরা কইত বুঝি বোনের বিয়ে নিয়ে,
বোন ব’সে শুনত কথা একটু দূরে গিয়ে ৷
লাজুক আঁখে চাইত সে হায় প্রকৃতি পানে
রক্তিম রেখা উঠত ভেসে তাঁহার মুখখানে ৷
একেক ক’রে ভাই সবে সুধায় তাঁরে হেসে
বিয়ে সে করবে কিনা কাউকে ভালোবেসে?
লজ্জায় গাল লাল হ’ত ভাইদের কথা শুনে!
চম্পারাণী নীরব রহিত তাঁর সখীদের সনে ৷
আমি অকবি শুনতাম রোজ ওদের কলহ,
মাঝে মাঝে বাহির হ’য়ে বলতাম চুপ রহ ৷
আমায় দেখে ওরা সবাই ধ্বনি তুলত জোর!
কামড়ে বুঝি দেবে ওরা কান দুই টি মোর!
সাহস মনে আছিল বটে ভয়ও ছিল বেশ,
তাই আমি চুপ ক’রে দেখলাম তার রেশ ৷
সাত ভা’য়ের একি বোন সে যে চম্পারাণী,
স্নেহভেলায় থাকে সে হায় ধাত বেশ  দামী!
হঠাৎ আমায় চম্পারাণী দেখল বাঁকা আঁখে!
পালকঘোমটা টেনে তাঁহার বদনখানা ঢাকে!
আমিও মোর নয়ন দুই সড়া’লাম গোপনে!
জানি না সাত ভাই তাহা দেখল কেমনে!
হঠাৎ সবে ঘিরল মোরে আমার চারিপাশ,
উঁচু স্বরে ধূসর ঠোঁটে বুঝি ফেলে মোর লাশ!
ভীত মনে আমি একা দাঁড়িয়ে একপাশে ৷
ভাই সবে কোমল স্বরে বোনকে জিজ্ঞাসে—
এই লম্বা মত মসী কালো তোর প্রিয় বুঝি!
শত পাত্র মাঝে শেষে এই পেলি তুই খুঁজি?
এহেনো কথা শুনে মোর আঁখে ঘনায় লাজ!
চম্পারাণী চমকে উঠে তাঁর শিরে পরে বাজ!
নীরবে চরণ ফেলে আমি এলাম ঘর পানে ৷
অপমানিত মন আমার তবু রহে ওইখানে!
ভুলিতে চাই আমি ওদের  বাক্য অপমান,
দুই তিন দিন আমিও রহি ভুলে সে নাম ৷
দুই তিন দিন পরে যবে বাহিরে তে আসি,
ওরা কেহ নাই হে কবি মোর পাশাপাশি!
ওরা সবে পালিয়েছে বোনকে সনে নিয়ে,
বিয়ে বুঝি দেবে তাঁরে ঐ ঠিকানায় গিয়ে!
পরিবেশ তো শান্ত এখন শান্তি মোর মনে ৷    
মোর খড়ের ঘর কাঁদে কবি ওদের বিহনে!
পরাণ মোর চমকে উঠে জাগে বহু ব্যথা
আমি যবে স্মরি মনে তাদের নানা কথা!
চম্পারাণীর আঁখিপলক আজও পরে মনে
অশ্রুনালী চিরে কবি বান আসে দু’নয়নে!
এত কথা ক’লাম আমি ভাবছো সব মিছে
একদা তবে এসো সবে মোর বাড়ির পিছে!
যবে ওরা আসবে আবার মোর ওই চালে
তথ্য আমি দেব তোমা’ তখনি সেই কালে ৷
সময় খরচ না কইরে এসো জলদি চ’লে!
দেখবে তদা কেমন ক’রে ওরা কথা বলে?
ঘিরবে তোমায় চারিদিকে ওরা দল বেঁধে
বোন ওদের র’বে চুপ শুনবে কান পেতে ৷
চম্পারাণীর স্বভাব এমন মুগ্ধ তোমা প্রাণ
চিত্ত তব উঠবে দুলে বাজবে প্রেমের গান ৷
এই ব’লে খতম করি আমার প্রিয় কবি!
তুমি যবে আসবে এথা দেখবে তাহা সবি ৷
           ***********
               *******
                   ***
                     *