অনন্ত জন্মের পথে
আমি মানবতার দিকে ছুটি অবিরাম
কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি না তবু।
স্বাধীনতার দিকে যেতে যেতে
আমার প্রতিটি জীবন মিলায় নিঃশেষে
মোমবাতির শিখার মতো অনিবার।

আমার প্রথম জন্মটা গেল বয়ে
শুধু সমতার স্বপ্ন বুনে বুনে,
এক জন্ম কাটল মর্যাদার স্বপ্নে মগ্ন হয়ে।
আমার বেদনা গভীর,
মানবাধিকারের স্বপ্ন দেখার তরে
আমি মাত্র একটি জীবন পেলাম অধীর।

পরের জন্মে উদ্দাম
আমি বেরিয়ে পড়লাম ন্যায়ের সন্ধানে।
পথে চলতে চলতে দেখি অবিরাম
সকলের সমান পদচিহ্ন
তার প্রতিটি রেখা সুমহান
আমাকে করে তোলে উত্থান।
সেই চিহ্ন, আমার দৃষ্টি, আর হৃদয়কে
এমন উজ্জ্বল করে তোলে অনুপম,
যে আমি নিজেকে হারাই নিমেষে
সেই সমতার পথ অনুসরণ করতে করতে
আমার সেই জন্মটা মিলায় নিঃশেষে।
আমার বেদনা! কী যে বেদনা!
মাত্র একটি জীবন
আমি পেলাম অযাচিত
ন্যায়বিচারকে অনুসরণ করার।

আরেক জন্মে উদ্দাম
স্বাধীনতার কথা ভাবতেই-
আমার অন্তর থেকে সবচেয়ে গভীর
আর কোমল, আর শীতল নদীর মতন
কিছু বহে যায় অবিরাম।
সেই আকাঙ্ক্ষায় জগৎ নাচে ভেবে
আমি একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে
কাটাই জীবনটা নিঃশব্দে।
আমার বেদনা, আমার সেই স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ছিল
মাত্র এক জন্মের সমান দীর্ঘ অথচ ক্ষণিক।

আমার অসংখ্য জন্মের একটিতে
একটি শিশু আমার পথ রোধে দাঁড়ায়,
আমি তার নিষ্পাপ চোখে দেখি সমতার প্রতিবিম্ব-
উজ্জ্বল! উজ্জ্বল!! আরো উজ্জ্বল!!!
আর এক মুহূর্তে মিলাই কালের স্রোতে।

আমার বেদনা মাত্র একটি জন্ম
আমি শিশুর চোখের আলোয়
মানবতার প্রতিচ্ছবি দেখলাম অপলক।

এখন আমার সমস্ত পথ জুড়ে
দুলছে একটি আশার আলো অনির্বাণ।

সেই আলো অনুসরণ করে এ জন্মে হয়তো
আমি স্বাধীনতার কাছে পৌঁছাব না তবু;
কিন্তু আগামী জন্মগুলোতে আমি কোন স্বপ্নের দিকে ছুটব?