পদ্মার তীরে যখন বসন্তের নীলিমা জলে ফোটে,
আমার পদচারণায় তন্দ্রার মতো ঘন সবুজ পল্লবের ছায়া
বিস্তৃত হয় পথজুড়ে।
পলাশ গাছের রক্তিম মুকুল
বাতাসের মৃদু সুরে দুলছে, যেন মনে করায়—
সেই আলো, যা কাঁপছে আম গাছের কাঁচা পাতায়।
কৃষ্ণচূড়ার শিখা জ্বলজ্বল করে,
তবুও আমি একা।
কুঞ্জগুলির ফাঁক থেকে উঁকি দেয়
ঝুমকো লতার নীলাভ ফুল,
ধলেশ্বরীর ঢেউয়ে মিশে যাওয়া রঙের মতন।
বকুলতলার ঘাসে পায়ের স্পর্শে
বসন্তের সুর বাজে, মেহগনির পাতার সোহাগে
জমে থাকা শিশির মুক্তার মতো ঝিলমিল।
আমি এগোই—যমুনার স্রোতে
খেলে বেড়ায় বুনো হাঁসের পাল,
কদম্ব ফুলের কোমল ঝিলিক যেন
আমার শূন্য হৃদয়ে সোনালি মোহ বুনে।
মাগো, বসন্তের সন্ধ্যায়
কিশোর-কিশোরীদের কান্না শুনি,
তাদের মনের গভীর আশা
আমার নিঃসঙ্গতাকে তীব্র করে তোলে।
লিচুর ডালে ছোট ছোট ফলের হাসি,
কাঁঠালিচাঁপার ছায়ায় শিউলির অলঙ্কার,
ফুলের বনে মৌমাছির গুঞ্জন
সবকিছু যেন কোনো ছায়ালোকের গল্প।
শীতলক্ষ্যার তীরে ঢেউয়ের মাতাল সুরে
আমি যেন নিজেকে হারাই।
তরুণ তৃণভূমির ঘাসফড়িং
লাফিয়ে বেড়ায়, ফড়িংদের খেলা
পুকুরপাড়ে রঙের মেলা সাজায়।
তবুও আমার পথ থামে না।
তালগাছের সোনালি মুকুলে মৌমাছির গান
আমার শূন্য হৃদয়ে স্মৃতির প্রতিধ্বনি তোলে।
জোনাকি পোকা রাতের আঁধার ফুঁড়ে
মুক্তোছড়ার আলো জ্বালে,
তবুও আমি অন্ধকারে।
গ্রামের পথে কৃষকের স্মৃতির চোখ,
তরুণ-তরুণীর প্রেমের নীরব আলাপ
আমার পাশ কাটিয়ে যায়।
বসন্ত আসে, বসন্ত যায়—
তবুও আমার যাত্রা শূন্য,
আমার বসন্ত নির্জন।