খোকা আজ তোর জন্মদিন।
এই একটি দিনের জন্য
সারাটি বছর অপেক্ষা আছি।
আজ তুই কোথায় ?
আর আমিই বা কোথায় ?
সেই ছেলেবেলা থেকে তোর জন্মদিন-
কতই না আড়ম্বরের সাথে পালন করতাম।
তুই আমায় জড়িয়ে ধরে বলতি!
মা আজ তোমার হাতে রাঁধা পায়েস খাব!
আর কতই না বাইনা ধরতি- এটা নিব,
ওটা নিব বলে।
একবার জন্ম দিনে বলে উঠলি।
এবার জন্মদিনে আমাকে একটি নতুন সাইকেল দিতে হবে।
তোর জন্য সাইকেল কেনা হল।
কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস বল।
আজ তোকে দেবার মত কোনও সামর্থ্য আমার নেই।
আর্শিবাদের থালা হাতে তোর যে কাছে পৌঁছাবো-
তার কোনও ক্ষমতাই আমার নেই।
কারন তুই রয়েছিস সভ্য সমাজের ওপারে।
আর আমি রয়েছি সভ্য সমাজের এপারে ফেলে যাওয়া-জঞ্জালের মত
এক আশ্রয়ে!
তোরা যার নাম দিয়েছিস বৃদ্ধাশ্রম!
কি বিচিত্র এই দুনিয়া!
যার জন্য আমি কিছুই করিনি তারা আমার জন্য অনেক কিছু করছে।
কিন্তু যার জন্য অনেক কিছু করেছি !
সে আমায় বোঝা ভেবে ছুড়ে দিয়েছে –
বৃদ্ধাশ্রমে।
ছেলেবেলায় তুই খুব দুরন্ত ছিলি খোকা।
এক পুর্নিমার রাতে !
চাঁদের আলো এসে পড়েছে আমাদের বারান্দায়।
তুই কিছুতেই ঘুমাতে চাইছিলি না।
আমি তোকে ঘুম পাড়ানোর কত চেষ্টা করলাম।
ব্যর্থ হলাম।
তার পর সেই যে গান গাইলাম।
তোর মনে আছে-
          " আমার খোকা ঘোড়ায় চেপে যাবে চাঁদের দেশে।
           ঘুম পাড়ানি চাঁদের বুড়ি এসো খোকার দেশে।
           ঘুম দিয়ে যাও দুচোখ জুড়ে ঘুমাক আমার খোকা।
           কপাল জুড়ে পড়ুক শুধু চাঁদ মামার ঐ ফোঁটা।"
সব কিছুই আজ স্মৃতির রাজ্যে বিরাজমান।
বউ এর আঁচলে বন্দি তুই, আমি বৃদ্ধাশ্রমে।
                              ****