বাংলা ভাষা নিয়ে কৌতূহল


ভূমিকা :-
আচ্ছা, যদি কোনো কিছু কৌতূহল জাগে মনে, আর সেটা যদি সবাইকার সাথে ভাগ না করি, তাহলে মনটা কেমন যেন অবিচ্ছিন্ন থেকে যায়না?।তাই হটাৎ ইচ্ছে হলো, আমাদের এই অতিপ্রিয় প্রাণের বাংলা ভাষা তো আমরা রোজ কোটি কোটি লোক ব্যবহার করি, কিন্তু এর নারী নক্ষত্রের একটু খবর নিলে কেমন হয় ? কিছু খবর সংগ্রহ করলাম, আর সেই কৌতুকের ভাগ আসরের প্রিয় বন্ধুদের  সঙ্গে ভাগ করে নেবো বলেই লেখবার ইচ্ছে হল।


আলোচনা :-
দেখুন ভাই, প্রথমেই বলে রাখি যে আমার এই লেখার কিছু ভুল ত্রুটি থাকার আশঙ্কা আছে।আর সেটা থাকা কিছু অস্বাভাবিক নয়।তবে চেষ্টার ত্রুটি রাখবোনা রহস্যের গভীরে ঢুকে কতটা সমাধান করতে পারলাম।নদীর উৎপত্তি হয় পর্বতের কোন শিখর থেকে, আর তা বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে সবশেষে সমুদ্রে গিয়ে মেশে।আমাদের বাংলা ভাষাও ঠিক একইভাবে বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে নদীর ফল্গুধারার মতো আমাদের বাণীধারায় বয়ে বয়ে অজানা অতীত অতিপ্রাচীন প্রবীণ চিত্তের সঙ্গে আধুনিক নবীন চিত্তের মিলন ঘটিয়ে এক অসাধারণ উতকৃষ্ট ভাষার সৃষ্টি হয়েছে।হৃদয়কে আজ ধ্বনিত করছে সেই বাংলা ভাষা, মনকে করছে আবিষ্ট।এ এক বিস্ময়,এ এক রহস্য! আজ আমরা সেই বাক্যস্রোতের সঙ্গে একান্তভাবে মিশে গিয়ে দিনের পর দিন উর্বর করছি এই ভাষাকে গল্প ও কবিতার মধ্যে দিয়ে।    


আমাদের প্রাণ, আমাদের অনুভূতি ও মন প্রতিক্ষনে নানানরূপে,নানানগন্ধে,জাল বিস্তার করে চলেছে। ঠিক একইভাবে আমাদের ভাষা সৃষ্টি করে চলেছে নানান রসের ছন্দ ও শব্দ।এ যেন এক কোনো জাদুশক্তির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।ইতিহাস বলে যে প্রাচীন ভারতবর্ষে ভাষা দুই শাখায় বিভক্ত ছিল--শৌরসেনী ও মাগধী।শৌরসেনী ছিল পাশ্চাত্য হিন্দির মূলে, মাগধী অথবা প্রাচ্যা ছিল প্রাচ্য হিন্দির আদিতে।মাগধী এবং শৌরসেনীর মধ্যে মাগধীই প্রাচীনতর।উভয়ের ভাষায় মূলগত ঐক্য থাকলেও কিছু কিছু প্রভেদ আছে।
ভারতবর্ষে মাগধীই একমাত্র প্রাকৃত ভাষা ছিল।


মাগধী ভাষা
এটি একটি প্রাচীন ভারতের ভাষাগোষ্ঠী এবং উপভাষা। দক্ষিণ বিহারের মগধ নামে পরিচিত অঞ্চলের সাথে এই ভাষার নামের যোগ রয়েছে। ভারতের পাটনা এবং গয়া জেলা নিয়ে মগধ সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। ভাষাবিদের মতে মাগধী প্রাচীন মগধ রাজ্যের ভাষা ছিল। গৌতম বুদ্ধ এই ভাষাতে কথা বলতেন। মাগধী ভাষাটি ভোজপুরি ভাষা ও মৈথিলী ভাষার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।


শৌরসেনী
শৌরসেনীর মথুরা অঞ্চলে প্রচলিত ছিল। মথুরার রাজা শূরসেনের নামানুসারে এর নাম হয় ‘শৌরসেনী’। সংস্কৃত নাটকে সাধারণ নারী ও অশিক্ষিত পুরুষ এ ভাষায় কথা বলত।


উপসংহার :-
দূর কালের মাগধী ভাষা আর্য জনসাধারণের বাণীধারায় বয়ে এসে যুগযুগান্তর ধরে আজ প্রতিটি বাঙালির হৃদয়কে ধ্বনিত করেছে, উর্বরা করেছে তার চিত্তভূমিকে। আজও চলেছে তার প্রকাশ-লীলা।দেশের সীমা ছাড়িয়ে সর্বদেশের আবেষ্টনের সঙ্গে এসে মিলেছে যেন সেই প্রবাহ। সেই দূর কালের সঙ্গে আর আমাদের এই বর্তমান কালের, বহু দেশের অজানা চিত্তের সঙ্গে আর বাংলাদেশের নবজাগ্রত চিত্তের মিলনের দৌত্য নিয়ে চলেছে এই অতিপুরাতন এবং সেই অতি-আধুনিক ব্যাক্যস্রোত।


টিকা :
এসব কথা ভেবে কৌতুহলের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে।ভাষা জিনিসটা আমরা অত্যন্ত সহজে ব্যবহার করি, কিন্তু তার নাড়ী-নক্ষত্রের খবর রাখা একুটও সহজ নয়। ভাষার ইতিহাসে একটা অবিচ্ছিন্ন সূত্র আছে। বদলও চলেছে পদে পদে। কেন বদল হয় তার ভালো কৈফিয়ত সব সময়ে পাওয়া যায় না।বিষয়টাকে গভীরে গিয়ে দেখেছেন ও তলিয়ে বুঝেছেন যেসব ভাষাবিদ ,
তাঁরাই একমাত্র পারেন তাঁদের সুসম্বন্ধ প্রণালীতে আমাদের ভাবনার কৌতূহল মেটাতে।আমাদের এই ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমরা তো কেবল পায়ে-চলা পথের ভ্রমণকারী।বাউলদের মতো রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ঝুলিতে যে ভিক্ষা জোগাড় করতে পারলাম, তাই আমি  আসরের বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম আমার খুশির ভাষা মিলিয়ে।


আমার লেখার যতটুকু শক্তি, সেই অনুসারে যদি কিঞ্চিৎ ফল পাওয়া যায় তাই মনে করেই আনন্দিত হব।
সবার জন্যে রইলো আমার মনের গহীনতম স্থান থেকে অনন্ত প্রীতি,শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।