কবিতা আসলে তুমি কার ? কার কাছে তুমি প্রথমে আবির্ভূত হও? কাকে তুমি করো ধন্য ? কৃতার্থ করো কাকে? কাকেই বা করো অভিভূত? কবিকেই তো নাকি ! কবি তো কবিতার ক্রীতদাস, সেবক, পূজারী ও অতৃপ্ত প্রেমিক? কবির সঙ্গে কাব্যলক্ষ্মীর গভীর প্রেম না থাকলে কবিতা জন্ম নিতো কেমন ভাবে? আর সেই সার্থক প্রণয়লীলা থেকে সৃজনলীলা এক একটি করে হয় কবিতার জন্ম। শব্দ ও সংকেতের লীলাবৈচিত্রে সে বেড়ে ওঠে ধীরে ধীরে।তাহলে পাঠক? তার কি কোনো স্থানই নেই? তাই কখনো হয় নাকি? কবি ও কবিতার মধ্যে নিবিড় সখ্যতা গড়ে তোলে কে? পাঠক তো হলেন কবির হৃদয়সঙ্গী, তার অন্তরঙ্গ সখা, সুখ দুঃখের অংশীদার। তা সে যেধরনের কবিতাই হোক না কেন? কবির অস্বাক্ষরিত দিনলিপি কবিতা। কবি কিনা পারে? কবি  মালতির মতো গ্রামের একজন সাধারণ মেয়েকে অসাধারণ করে বিলেতে গিয়ে নরেশ সেন কে তাক লাগিয়ে দিতে পারে , পারে অসামান্য করে দিতে তাকে ('সাধারণ মেয়ে' , রবীন্দ্রনাথ)। কবি পারে মাত্র ছ' লাইনে স্বীকারোক্তিমূলক কবিতায় ছ'শো লাইনের নৈর্ব্যক্তিক কাব্যনাট্য। তাতে ধরা পরে যায় সামগ্রিক অভিজ্ঞতার পূর্ণ ব্যক্তিত্ব। ধরা পড়ে যায় ইতিহাস, ধরা পড়ে যায় ভূগোল। বুকের রক্ত দিয়ে লেখা হয়েছে আজকের তৃতীয় বিশ্বের কবিতা, কৃষ্ণসাহিত্য, নারীসাহিত্য।কবির কবিতার ভেতরে থাকে এক মোহিনী আড়ালের জাল। সেখানে লুকিয়ে থাকে তার জীবনীশক্তি।
আর সেই শক্তির মেশিনটি সবসময় মনিটরিং করছে কবির রক্তচাপের ওঠানামা ও  হৃদয়স্পন্দনের ক্যাপাসিটি।
কবিতা লেখার সময় কবি এক ব্যক্তি আর ঠিক একইভাবে মাছের বাজারে অথবা রেশনের লাইনে দাঁড়ানো সেই একই কবি হয়ে যান ভিন্ন ব্যক্তি। বদলে যায় তার ব্যক্তিত্ব। কবিতা যখন বনিতা হয়ে পেছন থেকে কবির চোখ টা টিপে ধরেন, সেই আলতো হাতের ছোঁয়াতে কবি ঠিক তাকে চিনে নেন। আর প্রণয়ের সেইক্ষণে হয় শুরু।শুরু হয়ে যায় পর্বত আরোহণ, ডুবুরির পোশাকটি পড়ে গহীন সাগরে ডুব দেয়া। অক্সিজেন যখন আসে ফুরিয়ে তখন তৈরী হয়ে যায় কবিতা। কিছু ভাবনা, কিছু আর্তি, কিছু শ্রম, কিছু ভালোবাসা সব মিলিয়ে হয়ে যায় কবির কবিতা লেখার সার্থক রূপায়ণ।


সব কবিবন্ধুদের জন্যে রইলো আমার মনের গভীরের ভালোবাসা!!!!