সতী
কবি – পবিত্র চক্রবর্তী
বসন্ত শেষের দিন উঠিল কান্নার কলরব ,
দুয়ারে বাজিছে বাদ্য , ফুলের সৌরভ ।
সাজিয়াছে আজি রাজনন্দিনী –
অলক্ত রঞ্জিত পদ , চন্দন চর্চিত সীমন্তিনী ।
আসি দাস-দাসী সেবিছে তারে বারংবার –
বেনীবদ্ধ কেশভার, অকাল রদনে খসিছে পুস্পভার ।


পূজারি পড়িল বৈদিক মন্ত্র , সেবিল ঈশ্বরে –
আরতির থালি রাখি , নমিল গদ গদ ভক্তিভরে ;
মাগিল –“ হে বিধাতা, দাও যাহা দিবে
লইব মাথা পাতি ,” অশ্রু বহিল নীরবে ।


পড়িল আসিয়া রাজনন্দিনী রাজকূলবধু
চরণে তাহার , “ রক্ষা কর , রক্ষা কর এ প্রার্থনা শুধু !”
হাসিয়া কহিল পূজারী , “ মাতা এত মঙ্গল ,
দেখহ চারিদিক বসন্তহীন কোকিলের মধুর কোলাহল ;
এ কাহার তরে ? কহ মোরে সতী !
যাইবে তুমি আপন আলয়ে , কেন তব দুর্মতি !”
“ সৈনিক ধরহ এ অভাগিনী বুদ্ধিহীনা নারীরে ;
আইস পরাইয়া দিই মন্ত্রপূত সিন্দুর তব চিকুরে ।”


বাজিল পাঞ্চজন্য , উঠিল জয় জয়কার –
রানী হইবে সতী , এ যে বিধাতার প্রতিকার ।
বহিয়েছে শ্বাসী শীতল নদী মৃদুমন্দে –
গাহিতেছে গায়ক , নাচিছে নর্তকী আপন ছন্দে ।
সাজিছে চন্দন চিতার পালঙ্ক –
আজি নাহি কোন দোষ , মুছিয়াছে সব কলঙ্ক ।


মুক্ত কেশদাম , খসিয়াছে পুষ্প হার
অঞ্চল লুটাইছে ধরনী পড়ে , অশ্রু নাহি আর ।
সজোরে লৌহসম শত হস্ত উঠাইল অগ্নি শয্যায় ,
নগ্ন হাস্যে , জয়ধ্বনি , লইল সতীর পদধূলি মাথায় ।


একি ! একি হয় চারিধার , কম্পন !
সজাগ হইল সবে , লাগিল শিহরণ ।
মাতা সতী জ্বলিছে , হইবে ঈশ্বর –
তবে কেন এ অমঙ্গল , স্তব্ধ সব রব !


সহসা দৈববাণী কহিল – “ যাহারে তুই পূজিস
করিস নিত্য সেবা , কেন মিছে অপবাদ দিস !
ঈশ্বর বন্ধী , ভাবিস মূর্খ সবে ওরে –
সতী যদি হয় ঈশ্বর , মারিয়াছিস তোর ঈশ্বরে ।।