খনকার দিঘী, বয়সের ভারে নূজ্য, এক দাতা হাতেম তাঈ,
বিশাল জনপদ আদমপুরের কেন্দ্র ভূমি, সভ্যতার নির্ভিক সাক্ষী,
মানুষের কল্যাণে উৎসর্গকৃত, কল্যানকামী এক ঘুমন্ত সরোবর।
এলাকার মানুষের পানির অভাব মোচনের ব্রত নিয়ে যার জন্ম,
তৃষ্ণার্থ মানুষের তৃষ্ণা নিবারণই আজন্ম যার লালিত স্বপ্ন,
সে কি নীরব থাকতে পারে মানুষের প্রয়োজনকে উঁপেক্ষা করে?
একদা প্রয়োজন দেখা দিল মানুষের পণ্য বিক্রয়ের জন্য এক হাট,
নীরবে বসে থাকতে পারেনি মানুষের কল্যাণকামী এই সরোবর।
তাঁর দুই পাড় উজাড় করে সৃষ্টি করে দিলেন এক বিরাট হাট,
সেখানে হাট বসে সপ্তাহে দুই দিন, কত মানুষের হয় সমাগম,
কত কোলাহল, কত লেনদেন, ধরা দেই প্রাপ্তির অনাবিল আনন্দ।
প্রতিটি মানুষের চোখে মুখে ফুটে উঠে প্রশান্তির বলি রেখা,
স্বপ্ন পূরণের সাথে দূর দুরান্তে পন্য নিয়ে যাওয়া কষ্টের লাঘব,
আর বাড়ীর দোয়ারে নিত্ব প্রয়োজনীয় পন্য প্রাপ্তির আনন্দ।
বিনিময়ে দিঘীর প্রাপ্তি আঘাত, অনাদর, আর বর্জের স্তূপ।
তবুও নেই কোন মান-অভিমা্‌ন, নেই কোন প্রতিবাদ,
অধিকন্তু নিজ অঙ্গ কুরবান করে অকাতরে বিলিয়ে দেয়
তাঁর গা ঘেসে থাকা বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে এক চিলতে জমি,
মসজিদ, মাদ্রাসা, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, ডাক ঘর,
ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র, গোদাম ঘর, আরও কত কি?
এই ভাবে নিজেকে নিঃশেষে বিলিয়ে দেয় আত্মরক্ষার সকল বাঁধ।
নিরবে দাঁড়িয়ে থাকে পাড় হারা সরোবর, তার বিশাল মৎস সম্পদ,
নীল পদ্ম, গুল্মরাজি আর সচ্ছ পানি নিয়ে, কালের সাক্ষী হয়ে।
তাও সহ্য হয়নি অকৃতজ্ঞ মানুষের, দিঘীর পরিধি সংকোচন,
বর্জ আর মৎস্য খাদ্য হিসাবে অখাদ্য নিক্ষেপ ইত্যাদি কারণে
আজ যেন দুরারোগে ব্যাধিতে আক্রান্ত, কলুষিত এর সচ্ছ পানি।
নীল পদ্ম আজ নির্বাসিত, পুকুরের পানিতে বসত গড়েছে পুতি গন্ধ,
মানুষের অত্যাচারে অস্থিত বিলীন হতে যাচ্ছে আজ এই পরপোকারীর,
কিন্তু নীরব পরিবেশবাদী, জনপ্রতিনিধি, সমাজ কর্মীসহ আম জনতা,
ভাব দেখে মনে হয়, পরোপকারীর পরিণতি এমনিই হতে হয়।
কিন্তু কেন? মানুষের অন্তরের বিবেক কি আাজ মৃত না শৃংখলিত?
মানুষের কল্যাণে উৎসর্গকৃত, এক সরোবরের অস্তিত্ত রক্ষার জন্য
বিবেকের ঘোমটা খুলে আমরা কি দিতে পারিনা হুংকার? অন্ততঃ একবার।