(শেখ সাদী (রঃ)এর গুলিস্তাঁর হেকায়াত(২৪) অবলম্বনে)    


শাহানশাহ ‘আমর লাইস’  এক বড় বাদশা,
দুনিয়া জোরা ছিল তার নাম ডাক।
রাজকোষ ভরা ছিল তার ধন সম্পদ,
কেল্লা ভর্তি সেনাপতি আর সিপাই লস্কর,
প্রাসাদ ভরা দাস দাসী, পাইক পেয়াদা,
আর গোলামেরতো নেই কোন কমতি।
একদা তার এক বিশস্ত চতুর গোলাম,
সুযোগ বুঝিয়া প্রসাদ ছেড়ে দিল চম্পট,
গোলামের সাহসে রাজা রাগে থর থর।
ফরমান দিল ধরিয়া আনিতেই হবে,
অবাধ্য গোলামেরে যেথা পাও সেথা হতে।
রাজার ফরমান পেয়ে যত হুকুমবরদার,
ছড়াইয়া পরিল খোঁজে, সারা দেশময়,
অবশেষে খোজে পাওয়া গেল তারে,
রাজ্যের কোন এক নিভৃত কোনে।
সেখান থেকে তাকে ধরে নেয়া হল,
সোজা রাজদরবারে, বাদশাহর কাছে।
রাজ দরবারে ছিল এক চতুর উজির,
সে ছিল গোলামের উপর বেজায় রুষ্ট।
সুযোগ বুজিয়া কহিল, জঘন্য এ কাজ,
রোধীতে অন্যদের এ হেন জঘন্য কাজ,
একটাই পথ, তা হল তাকে করা হত্যা।
চতুর গোলাম বাদশাহর সামনে জমিনে
শির পেতে দিয়ে শুধাল আলমপনা,
উজিরের মতে যদি থাকে তব মর্জি,
এর বিরদ্ধে নেই মোর কোন আর্জি।
একটু পরে গোলাম কহিল আবার, হুজুর,
সারা জীবনইতো খেয়েছি তব নিমক,
তাই মরণকালে দিতে চাই প্রতিদান একটু।
গোলামের কথা শুনে শুধাল বাদশা,
বল, কি প্রতিদান দিতে চাউ তুমি?
জাহাঁপনা, পরকালে হাশরের মাঠে
আপনি পরিবেন ধরা, হত্যার দায়ে,
বিচার দিনের মালিক আল্লাহর কাছে,
তব গোলামে তখন সহিব তা কেমনে।
তাই, আমায় হত্যা করিতে সঙ্গত,
অনুমতি দিন মোরে, করিতে হত্যা
উজিরকে প্রথম, পরে উজির হত্যার
কিসাস সরূপ্‌, করিও হত্যা মোরে।
গোলামের বুদ্ধি দেখিয়া রাজার আসিল হাসি।
হাসি থামিলে রাজা ঘুরিলেন উজিরের দিকে
কহিলেন উজিরবর কি গতি করিব এখন।
বাদশাহর কথা শুনিয়া বলিয়া উঠিল উজির
মান্যবর, একে বিদায় করা উচিৎ প্রসাদ থেকে
তাই বলি, কবরে শায়িত আপনার পিতার
রূহের সাদকা স্বরূপ, তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে,
আযাদ করিয়া দিন জীবনের তরে, যাতে
সে কভূ ফেলিতে না পারে মুসিবতে মোরে।
প্রকৃত অপরাধতো করেছি অবুঝ আমিই,
খেয়ালের বশে করেছি হেলা, গুণীজনদের কথা,
প্রমানিত হল আবার তাদের কথাই যতার্থতা
‘করিলে যখন তীরের নিশানা কারো দিকে
সেও ঘুরাবে তীরের ফলা তোমার দিকে’।
‘আমি যখন ভাবি শত্রু মোর নাগালের মাঝে
আমিও নির্ঘাত তখন শত্রুর নাগালের মাঝে’।