আমি ঈশ্বরের কথা অনেক শুনেছি।
শুনেছি তিনি ভক্তের জন্য নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে পারেন।
হতে পারেন কল্পতরু।
কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন,
ভক্তের সেবায় দেবতা কুলিও হতে পারে।
ঈশ্বরের অবস্থান ভক্তের মনে। ভক্তির মধ্যেই ঈশ্বরের প্রকাশ।


আমি জেনেছি ঈশ্বর হন নিঃস্বার্থ । সর্বদা ভক্তের জন্য তাঁর মন কেমন করে। ভক্ত কিভাবে সুখে শান্তিতে থাকবে তাই নিয়ে ঈশ্বর সদাই চিন্তিত থাকেন।


ঈশ্বর নাকি ভক্তকে সব সময় সঠিক পথে চলার দিশা দেখিয়ে দেন। ঈশ্বর অন্ধকারের দিনে আলো হয়ে সহায় হন ভক্তের। প্রবল ঝড়কেও রুখে দেন ঈশ্বর।


আমি ঈশ্বরকে খুঁজেছি, অনেক খুঁজেছি। মন্দির মসজিদ গির্জা সব জায়গায়।এমনকি পথে ঘাটে--সব মানুষের মধ্যে, নিজের প্রিয় আত্মীয় স্বজনের মধ্যে।


আমি ঈশ্বর দেখিনি,
দেখেছি কতগুলো উস্কোখুস্কো চুল, সাদা কালো দাড়িওয়ালা মানুষকে।
যে মানুষেরা সারাজীবন এক বটবৃক্ষের মতো আগলে রাখে তাঁর সন্তান ও পরিবারকে।


দেখেছি সেই লোকগুলো কিরকম করে তিলে তিলে নিজের সর্বস্ব দিয়ে সাজিয়ে তোলেন সন্তানের জীবন।
সেই মানুষগুলো সূর্যের মত দীপ্তি দেয় আর নিজেরা পুড়ে ছাই হতে থাকে।


একই পোশাক একই হাওয়াই চটি পড়ে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিয়েও মানুষগুলো সন্তানকে এনে দেন সাহেবি পোশাক।
প্রত্যেক দিন নতুন নতুন উপহার।


নিজের সন্তানকে দামি রেস্টুরেন্টে যাওয়ার জন্য হাজার টাকা দিয়ে অফিসে গিয়ে জং ধরা টিফিন বক্স থেকে কখনো দুটো রুটি আর একটু সবজি আবার কখনো শুকনো মুড়ি মহাআনন্দে খান মানুষগুলো।


বাড়ি ফিরে নিজের সন্তানকে হাসিখুশি দেখলেই
তাঁদের মুখে ফুটে ওঠে হাসি। ছোট্ট সন্তানটাকে একবার কোলে তুলে নিলেই সারাদিনের সকল ক্লান্তির অবসান।
বাড়ি ফিরেও সন্তানকে একটু আনন্দ দেওয়ার জন্য তাঁদের  মধ্যে সঞ্চারিত হয় নতুন উর্যা।


সন্তান ও পরিবারের কষ্টে সেই মানুষগুলো পাগলের মত দৌড়াতে থাকে এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্ত। রাতের পর রাত জেগে কেটে কাটিয়ে দেয়।সেবার কোনো খামতি রাখে না।


আমি দেখেছি সেই মানুষগুলোকে বিশাল ঝড়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে।নিজের জীবনের পরোয়া তাঁরা কোনদিনই করে না।নিজের সন্তানের আঙ্গুল ধরে তাঁরা সঠিক পথে চলা শেখান। কখনো কখনো বাইরে থেকে ভীষণ কঠোর হলেও মনটা তাঁদের চির কোমল।


সেই মানুষগুলো জীবনের শেষ দিনেও সন্তানের চিন্তায় বিহ্বল।


হ্যাঁ আমি ঈশ্বরকে পেয়েছি। ঈশ্বরকে পেয়েছি ওই মানুষগুলোর মধ্যেই। ঐরকম অনেকগুলো ঈশ্বরের মধ্যে আমার ঘরেও আছেন এক ঈশ্বর। তাঁর ভালোবাসা ও স্নেহের চাদরেই আমি বড়ো হয়ে উঠেছি।


যোগ্যতার মাপকাঠিতে নিজেকে মাপতে চাই না--তবে চাই সারাজীবন সেই ঈশ্বরের ছত্রছায়ায় থেকে তাঁর সেবা করতে।।


আমার ঈশ্বর আছেন, থাকবেন-- সারাজীবন আমার পিতা রূপে।