মাস্টারমশাই,
আপনি বড্ড বকাবকি করেন, মারেন
আমার সন্তান আপনাকে ভয় পায়।


কি বললেন,
ক্লাসে অমনোযোগী, পড়াশোনা করে না।
কিন্তু ও তো বাড়িতে সব সময় পড়ে।
ছ'ছটা প্রাইভেট টিউটর।
পড়াশোনা করে না কি বলছেন!
ও ঠিকই পড়াশোনা করে।
আপনি মিথ্যে বলছেন।


মাস্টারমশাই,
কিভাবে মেরেছেন দেখুন,
গালে লাল দাগ বসে গেছে।
কি করেছিল আমার সন্তান?
পরীক্ষায় টুকলি করছিল,
আপনি বাঁধা দেওয়ায়
আপনাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে?
আপনি আমাকে বলতে পারতেন।
এই সামান্য অপরাধের জন্য এভাবে চড় না মারলেই পারতেন।
আপনি জানেন আমার ক্ষমতা,
এক্ষুনি ক্লাব,নেতা,মন্ত্রী,পুলিশ সবাইকে
নিয়ে আসতে পারি।


সম্মান, আপনি যে সম্মানের কথা বলছেন,
আপনার সেই সম্মান ধুলিস্যাৎ করতে পারি এক মুহুর্তে।


ভুল করেছেন।
হ্যাঁ ভুল তো করেছেনই।
ভবিষ্যতে আর যেন এরকম ভুল না হয়।,
এখনো সম্মান দিয়ে কথা বলছি এ আপনার সৌভাগ্য
নাহলে আজেকেই.......
ভবিষ্যতে মনে রাখবেন নিশ্চই,
নাহলে আমিও দেখবো  
আপনার হাজতবাস কে আটকায়।


মাষ্টারমশাই
আপনি এক্ষুনি থানায় আসুন।
আপনার বকাবকিতে অমুকের সন্তান অসুস্থ।
আপনার বিরুদ্ধে FIR করেছে।
কি বললেন?আপনি কিছু বলেন নি?
কিন্তু এরা যে বলছে আপনি বকেছেন,মেরেছেন।
আপনাকে এক্ষুণি একবার থানায় আসতে হবে ।
মাস্টারমশাইয়ের চোখে জল।


কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন নি।
বহুবার ছড়ি ধরেছেন সঠিক শিক্ষাদানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনের এই অপ্রতিরোধ্য কারিগর।
কিন্তু আজ কেনো মেরুদন্ড ঝুঁকে পড়ছে?
নরম মাটিকে শক্ত করে গড়ে তুলেছেন,
শিখিয়েছেন ন্যায় সততার পথে কিভাবে চলতে হয়।
তবে আজ জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে এ তার কোন পরীক্ষা?
বহু শিক্ষার্থী মাথা উঁচু করে বিভিন্ন পেশায় গৌরব অর্জন করেছে,
তাদের অনেকেই দেখা হলে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে,
শাসনের জন্য ধন্যবাদ জানায়।
বহু শাসনের পরও আজও তাঁদের প্রিয় মাস্টারমশাই তিনি।
তবে কি শেষ মুহূর্তে তিনি হেরে যাবেন?


যুগ পাল্টে গেছে,
বুঝলেন, এবার অবসরের সময় এসেছে।
না,আজকের পর আর শিক্ষকতা করবেন না।
একটা দরখাস্ত টেবিলের উপর চাপা দিয়ে চললেন থানার উদ্দেশ্যে।


ভেজা চোখে থানায় পৌঁছলেন মাস্টারমশাই।
বড়বাবু মাষ্টারমশাইকে দেখেই প্রণাম করলেন পায়ে হাত দিয়ে।প্রিয় তপেনকে চিনতে ভুল হয়নি ঝাপসা চোখেও । কাঁপা হাতে আশির্বাদ করলেন।চোখের জল বাঁধ মানতে চায় না।
বড়বাবু নিজের চেয়ারে বসালেন মাষ্টারমশাইকে।


অভিযোগকারী অভিভাবকের উদ্দেশ্যে বললেন,
আজ আপনাদের মত পিতা মাতার জন্যই
দেশের ও দশের এই অবস্থা।
যে মাষ্টারমশাই ভগবানের সমান,
যিনি সমাজ গঠনের কারিগর,
যার হাতের ছড়ি সমাজের মেরুদন্ড সোজা করে,
ন্যায় অন্যায় বোধ শেখায়,
আমরা তাঁর হাত দুটোই মিথ্যা আইনের শৃঙ্খলে বাঁধতে চেষ্টা করি।
সঠিক সম্মানে সম্মানিত করতে পারিনা।
এ যেন ঠিক -"বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ"।