।।কংকালিতলার পথে।।
                
চলেছি কংকালিতলার পথে-
শিল্পাঞ্চল থেকে  বন-বনানীর ছায়াতল বেয়ে।
কখনও সবুজ-হলুদ-ধুসর মাঠের পাশে কত -
ছোট বড় জনপদ চেনা অচেনা যত
নদ-নদীর বুকের উপর হাইওয়ে ধরে।
বিরামহীন পথ চলা, থামা নেই
পৃথিবীর এই গভীর অসুখেরদিনে।


মৃত্যুর আবহে যখন মানুষেরা ঘুমাতেছে -
পেশার তাগিদে তখন অকুতোভয়েরা ছুটেছে।
দীর্ঘপথমাঝে  তরুছায়াতলে সজনহারা ক্লান্ত পথিক বসে-
নিঝুম দুপুরে সোনাঝুরি জংগলের   স্নিগ্ধ বাতাসে-
জৈষ্টের ভরা রোদে নির্জনতায় ঘুম আসে ।
অশরিরী রুপে নিকট আত্মারা  ধরা দেয় স্বপ্নবেশে।
সাথ দেয়  একাকী প্রিয়সন্তানে।  
পৃথিবীর এই গভীর অসুখেরদিনে।


বলেছিলো পথিক স্বপ্নের আবেশে-
যে রক্তবীজ বুনেছিলে তোমরা
কোন একদিন পৃথিবীর বুকে-
বয়ে চলেছি তা অর্ধশতাব্দী ধরে -
শ্বেত শুভ্র সলতেরঅগ্নিশিখা লয়ে।
শক্তি দাও আরো বহিবারে।
শত প্রলোভন লালসাএড়িয়ে,
শত বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে।
পৃথিবীর এই গভীর  অসুখের দিনে।


এবার ক্লান্ত আমি-
চারিদিকে পৃথিবীর দগদগে ঘা-
নিশান ওড়ায় ওড়া শত জনতারে লয়ে।
কতবার বলেছি তোমাদেরে
কেন দিয়েছিলে মোরে
শ্বেত শুভ্র সলতের শিখা?
কেন সঁপেছিলে মোরে সত্যকে আগলাতে?
পৃথিবীর এই গভীর অসুখের দিনে।


আজকের পৃথিবীতে
সত্য বয়ে চলা বড় কঠিন-
ক্রমশঃ ভীড় সরে যাচ্ছে
নীতিহীন অনৈতিকতার দিকে-
এখন একা হয়ে চলেছি দিনেদিন,
তবু বয়ে চলেছি।
আর কত পথ হাঁটবো-
পৃথিবীর এই কঠিন অসুখের দিনে।


তবে পেয়েছি কিছু অর্ধাহার-
অনাহার মানুষের সন্ধান,
পেশার সূত্র ধরে।
যারা নিজ অবলার দুর্দিনে ডেকেছে আমারে।
অনুভবে বুঝেছি চোখের ভাষা -
নিদান  দিয়েছি তাদেরে।
ভরষা জোগায়, সাহস দেয় মোরে।
তাই বাঁচি আজও ওদের সাথে মিশে, ওদের পাশে থেকে।
আরো শক্তি দাও মোরে
বলেছি আপন অশরিরী আত্মারে।
পৃথিবীর এই কঠিন অসুখেরদিনে।


প্রকৃতি নিঝুম এখানে-
সাদা বক উড়ে চলে।
রাজহাঁস নধরদেহে ফিরে আসে   মাঠেতে চড়ে বেড়ায় গরু মোষে। কারো পিঠে কাক বসে আছে ।
আজ রাখালের বাঁশির মেঠো সুর  নেই।বড় বেমানান লাগে।
দুরে আখড়ার বাউলের  গানে মাদকতা আসে।
শান্তির আধো ঘুমে অদ্ভুত  শিহরণ লাগে।
সত্যি আমিই তো- এই মহর্ষি, বিশ্বকবির পূন্যভুমিতে।
চকিতে স্বপ্ন ভাঙ্গে -
কোন ধাবমান তীক্ষ্ণ শব্দযানে।
হয়তো যাবে হাসপাতাল বা শশ্মানে।
পৃথিবীর এই কঠিন অসুখের দিনে।


বড় বেলা - পড়ে আসে।
দুরের জলাশয়ে মোষেরা এখনও গা এলিয়ে ।
উঠে বসি- যেতে হবে সুদুরেরপথে
পৃথিবীর এই কঠিন অসুখেরদিনে।
দেখি চাবি কাঠি যেথা ছিল সেথাই রয়েছে।
বুঝিআজও ভিন্ন মানুষ কিছুআছে
শত লালসার মাঝে।
যারা বাঁচাবে পৃথিবীকে
শতাব্দীর কঠিন অসুখ থেকে।