নয়াবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরিক্ষার খাতা
দেখতে গিয়ে উল্টে চলেছেন একের পর এক পাতা,
পাশে স্বামী কম্পিউটারে তখন ব্যস্ত ছিলেন কাজে
মেয়েটা,ঐ ঘরেতে পড়তে বসে লিখছে আজে বাজে।
হঠাৎ ঝাপসা চোখে জলের ফোটা করে ওঠে টলমল
উঠে আসি বলেন স্বামী- ' কি হয়েছে আমায় খুলে বল! '
' না গো অন্য কিছু না, লাগছে খারাপ একটা লেখা পড়ে
কতটা কষ্ট পেলে তবে ছোট বাচ্ছা লেখে এমন করে। '
কি লিখেছে! কোন  ক্লাসের খাতা কাটছ তুমি? '
' বলছি পরে, আগে দেখোতো কি করছে মোদের সুমি? '
' কি আর করবে খেলতে খেলতে ঘুমিয়েে পরেছে কখন
কি-ই বা লেখা? এভাবে তোমায় কাঁদালো যখন তখন! '
' দ্বিতীয় শ্রেনীর, '' কি হতে চাও তুমি? '' -প্রশ্নে  বিষয় ছিল
দুঃখি মনের "আধুনিক ফোন" ইচ্ছে  প্রকাশ ঘটিয়ে দিল।
"আধুনিক ফোন!" শুনলে  পরে ভাবছ এতে এমন কি আছে
কেন? বেছেছে? পড়ছি শোন, কি কারণ কত দুঃখ তার পাছে। '


"  আমি হতে চাই,
                 আধুনিক ফোন
সকালে উঠেই বাবা-মা  আমার, সযত্নে ফোনটা নিয়ে
আগলে ধরে পরিষ্কার করে হাতের আলতো পরশ দিয়ে।
সকালে মায়ের হয়না সময়, বাড়িতে থাকে অনেক কাজ
শুধু নিজের স্কুলের জন্য তৈরি হতেই মাথাতে পরে বাজ!
একা একাই স্নান করি, গা টাও মুছি একা একা
মনে পরে প্রতি সকালের - ' বাবা মায়ের ফোন মোছা দেখা। '


সময় অসময় যখন তখন ফোনেতেই ফোন এলে
ফোনটা তুলে মিষ্টি মিষ্টি কথা, সব কিছুকেই ফেলে
ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত বাবা -  বাড়িতে যতটুকু সময় থাকে
' স্কুল-সংসার '  হিমশিম মা, বাড়তি সময় দেবে কাকে!
দিদিমনি চলে গেলে, একাকি আঁকিবুকি; কাকে  বলব কথা
ওঁদের ফোনে কথা বলা, পরলে মনে - ' মনে লাগে ব্যাথা। '


কাজের শেষে বাড়ি়িতে এসে, টেবিলে ফোনটা রেখে আস্তে করে
চার্জ দেয় ঠিক মনে করে - অতিসাবধানে,যেন না যায় পরে।
নিজেরাই খাওয়ার পায় না সময়, আমায় খাওয়াবেে!
মাস গেলে মাইনেটা কি মাসি এমনি এমনি নিয়ে যাবে!
মাসি দিলেও, একা একাই খাই আমি নিজের হাতে তুলে
' খেতে খেতে চোখের জল মুছি,' সব  যেতে চাই ভুলে।


রাতের বেলা ঘুমায় যখন, ফোনটি রেখে বালিশের পাশে
দূর বিছানায় আমায় দেখে সে 'যেন বিদ্রুপেতে হাসে।'
সারা দিনের পরিশ্রমে, ক্লান্ত অবসন্নে ঘুমায় অসারেতে
মাঝরাতে জেগে গিয়ে না ফেলি অসুবিধায়, ঘুমে ব্যঘাতে!
ভয় পেয়ে গেলেও জেগে জল চোখে নিয়ে শুয়ে থাকি
ঐ সময় ফোন এলে - 'কেউ  কখনো ফোন ধরেনি নাি?'


সারাটা দিন সারাটা রাত, দিনের চব্বিশ খানা ঘন্টা
কাছ ছাড়া করে নাকো, তা সত্বেও দিয়েই রাখে মনটা।
আমার পরার জন্য দিদিমনি, দেখাশোনার জন্য মাসি
খাইয়ে দিতে পরিয়ে দিতে রাখতে চায় আরোও দাসদাসি!
পরের জন্মে ফোন বানিয়ে, ভগবান আমায় জন্ম দিও
বাবা মায়ের ভুল গুলোকে তুমি ক্ষমা করে নিও। "


'কাঁদছ তুমি! কি গো মনে হচ্ছে জল তোমার ঐ চোখে'
'এতটুকু বাচ্ছা মেয়ে, এত কষ্ট এত ব্যাথা গেঁথে রেখেছে বুকে!
কি নাম গো ঐ বাচ্চাটার, দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে যে বড়
কাল স্কুলে গিয়ে ঐ বাচ্চাটার বাড়ির ঠিকানার খোঁজ করো।
পরে যদি, কালই ওর বাবা মার সাথে কথা বলো তুমি'
'অন্য  কেউ না,আমাদেরই,'  লেখার শেষে-
                                               "ইতি,
                                                    আমি সুমি"
'