নাটক! জমজমাট আসর, থিকথিকে ভিড়।
ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে ধর্মযুদ্ধের সপ্তদশ দিন,
তিনটি গুরুতর অধর্মের কাজ করেও রণসাজে
কর্ণ, রথে চড়ে করছো যুদ্ধ!
প্রতিপক্ষে ধার্মিক বীরশ্রেষ্ঠ অর্জুন।
কর্ণ, দেখো তোমার অধর্মের খতিয়ান!
মনে পড়ে, একবার ধনুর্বিদ্যা চর্চার সময়
এক ব্রাহ্মনের গাভীকে হত্যা করেছিলে?
সভাগৃহে বস্ত্রহরণে দ্রৌপদীকে করলে অপমান?
এ যুদ্ধে অন্যায় ভাবে অভিমুন্যকেও বধ করলে।
ভাবো, অধর্মের কাজ কম হলো কি?
দেখছ কি বিপদের আশঙ্কা হচ্ছে ঘনীভূত?
আকাশও ঢাকছে মেঘে! শোনো, মেঘের গুরুগুরু ডাক।
সেসব আর হবে না কেন? মনে পড়ে?
সেদিন যখন করছিলে সূর্যদেবের আরাধনা
সে সময় এক ব্রাহ্মণ এসে করলো কী?
তোমার কাছ থেকে ভিক্ষা চেয়ে নিয়ে গেল
তোমাকে সূর্যদেবের দেওয়া অজেয় কবচকুণ্ডলী।
সেটি আজ হাতছাড়া, এ যুদ্ধে প্রাণে বাঁচবে কি?
তাছাড়া পিতামহ ভীষ্ম বলেছিল অনুজ ভাইদের
সাথে রেষারেষি বন্ধ করতে, সেও শুনলে না।
যুদ্ধ করছো নিজের ভাই অর্জুনের বিরুদ্ধে,
মনে পড়ে ব্রাহ্মনের গাভীকে হত্যা করার পর
তোমাকে দেওয়া ব্রাহ্মনের অভিশাপ?
বলেছিল না কি তোমার মৃত্যুকাল উপস্থিত হলে
মাটিতে বসে পড়বে তোমার রথের চাকা?
দেখছি এখন সেও হলো,
মাটিতে বসে পড়লো তোমার রথের চাকা।
কর্ণ, মনে পড়ে
ব্রহ্মাস্ত্রের বিদ্যা শিখতে গিয়ে করলে কী?
শিক্ষাগুরু পরশুরামের কাছে মিথ্যা ব্রাহ্মণ পরিচয়
দিলে, ভাবলে কখনো ধরা পড়বে না,
সেকি হয়? এ কর্ম করতে গিয়ে পড়লে ধরা,
তাঁর অভিশাপ মোতাবেক এ ঘোর সংকটকালে
ব্রহ্মাস্ত্রের মন্ত্র ভুলে বসে আছো!
আগে নিজেই এতোগুলো অধর্মের কাজ করলে
এখন বিপদে পড়ে আত্মরক্ষার্থে ধর্মের দোহাই দিয়ে
যুদ্ধ বন্ধ করতে বললে। 'যুদ্ধ বন্ধ? সে কি হয়?'
শ্রী কৃষ্ণের পরামর্শ অর্জুন শুনবে না কি?
সে এবার ছুড়বে বৈকি অঞ্জলীক বাণ।
সময় ঘনায়মান, ওই দেখো আসছে সে তীর,
মৃত্যুবান! এ বানে তোমার মুণ্ডচ্ছেদ হতে পারে।
ভাবো, করবে কী? আত্মরক্ষার আছে কি উপায়?