আদর্শবান,সত্যনিষ্ঠ এসব শব্দগুলো শুনতে
বেশ ভালো।বস্তুত এ যুগে এসব শব্দগুলো  
বিনষ্ট বিল্ব ফলের মতো।আজকাল তাদের
যেন কানাকড়িও মূল্য নাই।জঞ্জালে খাচ্ছে
গড়াগড়ি।
নেটে সার্চ করে সেদিন বললো কাকাতুয়া
এই যুগে খাদ বিহীন পাকা সোনার মতো
আদর্শবান,সত্যনিষ্ঠ মানুষেরা পৌঁছিয়েছে
লুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকায়।সমাজের এই
জনারণ্যে তাদের খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর।
বিদ্বানদের সম্পর্কে বললো সে এখন প্রকৃত
অর্থে বিদ্বান ব্যক্তিদের অভাব।মানুষ ছুটছে
ডিগ্রীর নেশায়।নেট সার্চ করে দেখেছে সে
আজও বিদ্বান মানুষেরা যায়নি লুপ্তপ্রায়ের
তালিকায়।এখনও জনারণ্যে তাদের খুঁজে
পাওয়া যায়।
কাকাতুয়া বললো,এই বিশ্বের অর্থনৈতিক ও    
সামাজিক পরিবেশ এতো দ্রুত বদলে যাচ্ছে
যে আজকাল এই তিনটি শ্রেণির মানুষদের
খুঁজে পাওয়া খুব সমস্যার।নেট রয়েছে,তাই
কিছুটা ভরসা।
সেদিন সে নাকি দেখেছে ‘আদর্শ’ পচে গলে
গড়াগড়ি খাচ্ছে নর্দমার পাশে এক জঞ্জালে।
লোকজন রুমালে নাক চাপা দিয়ে চলে গেল
পাশের রাস্তা দিয়ে।কেহ একবারও সেদিকে
তাকালো না ফিরে।
অদূরে এক উন্মুক্ত মাঠে তখন শুরু হলো
মোরগ লড়াই এর মতো কতিপয় মানুষের
নগ্ন ক্ষমতার লড়াই।জমে উঠলো বেশ।
তথ্য তালাশ করা কাকাতুয়ার খুবই নেশা।
সুযোগ পেলে সুরার মতো গিলে খায়।তাই
উড়ে গিয়ে অদূরে এক অশ্বত্থ গাছের ডালে
বসে দেখলো খেলা।
দেখেছে সে,এই প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের
নেই কোনও নীতির বালাই।বিশ্বের মহাকাব্য
গুলি লেখার সময় থেকে মানে এই শর্তটাই।
খেলতে এসে যে যেভাবে পারো প্রতিদ্বন্দ্বীদের
ল্যাং মারো।ইন্দ্রজিতের যজ্ঞ গৃহে লক্ষ্মণ কী
কর্মকাণ্ডটা করলো ভেবে দেখো।জীবন দিয়ে
লড়াই শেষে জিতে জয়মাল্য পড়ে হাসি মুখে
ঘরে ফেরো।
তারপর সব মানুষ যুদ্ধে জয়ী সেনাপতিকে
দেবে বাহবা।তার নামটিকে স্বর্ণাক্ষরে লেখা
হবে প্রভাবশালীদের তালিকায়।জনসাধারণ
তাদের ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টিগত কোনও
সমস্যা হলে প্রভাবশালীর কাছে ছুটে গিয়ে
আরাধ্য দেবতার কাছে যেভাবে গড় করে
বিপদ মুক্তির জন্য কামনা করে,সে ভাবেই
তাদের কাছে করবে প্রার্থনা।মুক্ত হস্তে দেবে
অর্থাঞ্জলি।সে সব অর্থে প্রভাবশালীরা অচিরে
আঙুল ফুলে কলাগাছের মতোই এক একজন
হবে নব্য ক্রোড়পতি।
সেদিন কাকাতুয়া সত্যনিষ্ঠদের তল্লাশে গিয়ে
দেখেছে তারা সংখ্যায় এতো নগণ্য যে খুঁজে
পাওয়া কষ্টকর।দিনভর চিরুনি তল্লাশি করে
তাদের খুঁজে পাওয়ার পরে বিস্ময়ে হতবাক।
দেখলো সে,এই মানুষগুলো লাঞ্ছিত,একেবারে
বলির পাঁঠার মতো।
বিদ্বানদের খুঁজতে গিয়ে হলো তার আরেক
অভিজ্ঞতা।কাকাতুয়া দেখলো এই মানুষদের
অনেকে ভুগছে কর্মহীনতায়।কোন রোজগার
না থাকায় তাদের উদ্‌ভ্রান্ত দশা।তাই ভিক্ষা
বৃত্তিকেও জীবিকা করে কেহ কেহ পথে পথে
ঘুরতেও বাধ্য হচ্ছে।বিপন্ন মানুষদের মতোই
তারা ভাসছে দুখের সাগরে।এই দুর্দশার চিত্র
দেখলো সে গ্রামে ও শহরে।
ফিরে যাবার আগে বললো সে,এ যুগে বাঁচার
তাগিদে আদর্শবান,সত্যনিষ্ঠ ও বিদ্বান ব্যক্তিরা
বাধ্য হচ্ছেন প্রভাবশালীদের কৃপা-প্রার্থী হতে।
দেখেছে সে এসব মানুষগুলো বাবুদের সামনে
গড় করে তাদের আনুগত্যকে স্বীকার করছে
স্বেচ্ছায়।বুঝছে তারা,এ যুগে বাঁচতে হলে এই
ছাড়া তাদের আর কোনও গত্যন্তর নাই।