শোনো সকলে।তবে আগে ভাগে
বলে রাখা ভালো একটি ঝড়ের
রাতে স্বপনে একটি আঁধার বৃত্ত
পরিক্রম করে তড়িঘড়ি ফিরেছি
আপনালয়ে।
সে রাতে ধূসর মরুভূমি দিয়ে
কত পথ গেছি,কে জানে!কেন
স্বপ্ন-পরী এতো দূর নিয়ে গেল
বুঝিনি তখনও।বলি,অভিজ্ঞতার
ঝুলিতে কী আছে জানো?
দেখেছি সেখান থেকে,আকাশটা
যেন শঙ্খচিলের ডানায় ঢাকা।
পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর,সে সময় যেন
ক্ষেপেছিল ভোলা মহেশ্বর।তখন
সেও বড়ো একরোখা।সতীদেহ
কাঁধে নিয়েই মাতলো প্রলয়ের
তাণ্ডব লীলায়।
যাক সে কথা।দেখেছি সেথায়
কোথাও বাতাস নেই,মহাশূন্যে
নেই একটু ভাসমান ধূলিকণা।
আলো যে দেখা যাবে না সে
সবও তো জানা।
আলোক বিজ্ঞানে ব্যাপকভাবে
আলোচিত ‘টিন্ডাল ক্রিয়া’এর
বদান্যতায় বুঝেছি,তখন কেন
সবদিক-ই শঙ্খচিলের ডানার
মতো খুব ঘন কালো,বেজার
অন্ধকার।
দেখেছি সেই অন্ধকারের বুক
চিঁড়ে মাঝে মাঝে নির্বিকারে
ভূ পৃষ্ঠের দিকেই ধেয়ে এলো
বিদ্যুতের ঝলক।বজ্রনাদ দের
সে স্থানে আসতে মানা,তবুও
অবাধ্যের মতো ভূপৃষ্ঠকে এক
পলক করলো নিশানা।
মনে হলো,কে যেন শাসানোর
ভঙ্গিতে ইঙ্গিত করলো ভূপৃষ্ঠে
শায়িত নির্মম অত্যাচারীদের
নরকঙ্কাল গুলির দিকে।তখন
তড়িতের ঝলকে দেখেছি এক
বিন্দু জলও ছিল না সাগরের
বুকে।  
দেখেছি,সে সময় এই পৃথিবী
যেন রুক্ষ সাহারা মরুভূমি।
কেন পৃথিবীর এই দুর্দশা?এর
উত্তর হয়তো জানেন কেবলই
অন্তর্যামী।
শুনবে কি সেই সময়ে প্রাণী
ও উদ্ভিদদের অবস্থা?বস্তুত
ভূমণ্ডলটির কোথাও দেখিনি
একটুকু প্রাণের অস্তিত্ব।
চারদিক জুড়ে ধূসর বালুকার
উপরে ছড়ানো ছিটানো ছিল
লক্ষ কোটি কঙ্কাল।জীবনের
মায়াজাল ছিন্ন করে সে সব
পশুপাখি এবং মানুষেরা কে,
কোথায় চলে গেছে!
বলবো কি!বিষণ্ণ এই ধরণী
সে সময় নিজের বুকটি চিঁড়ে
আমাকে এগিয়ে গিয়ে চারদিক
ঘুরে দেখবার জন্য পথ সুগম
করে দিলো।
বললো ধরণী,সাধারণ জনগণ
সহ সমগ্র জীবজগতের উপর
কতগুলি অত্যাচারী সুদীর্ঘকাল
চালালো নির্মম অত্যাচার।তারা
পৃথিবীকে করেছে ছারখার।
অসহায় মানুষদের দুঃখ দুর্দশা
দেখে নীলকণ্ঠ পাখি নাকি এই
পৃথিবী থেকে সুখ,শান্তি,প্রেম ও
ভালবাসা নিজের পালকে ঢেকে
নিরুদ্দেশে চলে গেছে।
তুমি কি জানতে চাও,তারপর?
লালসা ভোগী দুর্বৃত্তদের নির্মম
অত্যাচারে সমগ্র জগত থেকে  
জীবেরা বিদায় নিয়েছে।
অত্যাচারীরা বোঝেনি আগে
সমগ্র জীবজগত বিলুপ্ত হলে
তাদেরও বাঁচার থাকবে না
উপায়।বুঝলো যখন,সেসময়
নিরুপায়।তারা বিলুপ্ত হলো
এই বিশ্ব সংসার থেকে।
শুনবে কি,এই বিশ্ব পরিক্রমা  
করতে গিয়ে কত কী দেখেছি?
যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে সে সময়
যে পথে পাখি চলে গেছে,সেই
পথকে নিশানা করে স্বপ্ন-পরীর
সাথে অতীতের একটুকু ছোঁয়া
নিতে এ পৃথিবীর উত্তর মেরু
থেকে দক্ষিণ মেরু অবধি পথে
পথে দেখেছি আর্ত মানুষদের
দুর্বিসহ অজস্র বেদনার দাগ।
আরও অতীতে গিয়ে পাইনি
আর কোনও ক্ষত চিহ্ন।
সে সময় এই পৃথিবী বনানী,
ফলফলাদি ও শস্যে শ্যামল।
ঘুম ভাঙ্গার পরেই ভেবেছি,
এ কোন পৃথিবীতে আছি!