শুনেছি তার মতো সুচতুর
উচ্চ অভিলাষী বাঁশী বাদক
যে কোনও তল্লাটে ক’জন
জোটে সেই বিষয়ে আজও
অনেকের মনে সংশয়।
বিদ্বজ্জনেরা করছে বলাবলি
এমন গুণাবলী না-থাকলে
কেহ কি আর তাকে মনে
রাখে?
যে দিন হ্যামলিনের মতো
তার সুরেলা বাঁশিটি বেজে
উঠতো,জানো,সেদিন যেন
নবযৌবনা ইচ্ছামতী নদীর
হৃদয়-যন্ত্রেও বাজতো বীণ,
স্রোতধারার কলধ্বনিতেও
বইতো সুরের রেশ,মাধুর্যও
বেশ।
খেয়ালী নদী,সে বাঁশির সুর
শুনে,বলো,থাকতে পারে কি
স্থির?অধীর আগ্রহে অপেক্ষা
করতো কখন বাঁশি বাদক
এসে গানের সুরে ও লয়ে
করবে মাতোয়ারা।
এমনি একদিন ঘনিয়ে এলে
চপলা নদী উল্লাসে বইতে
শুরু করলো বাঁশি বাদকের
পিছে পিছে।
ছলাকলার ব্যাপারে একেবারে
অনভিজ্ঞ চপলা ভাবলো তার
ফাগুনের অপেক্ষার অবসানের
হয়তো হয়েছে সময়।
বাঁশীবাদকের সে বাঁশির সুরে,
কী জানি,মাদকতা ছিল কত
খানি,তটিনী কখনো বিপদের
কথা ভাবেনি।বাঁশি বাদকের
চাতুর্য তীরের ফলার মতো
অন্তরে বিঁধেও যেতে পারে
ভাবেনি কখনও।
জীবন নদীতে কত কী ঘটে
চলার পথে!চপলা নদী,সরল
বিশ্বাসে বিলম্বিত লয়ে তার
পিছে-পিছে চলতে গিয়ে পথ
বদল করে চলে গেছে যখন
যে দিকে তাকে বাঁশি বাদক
নিয়ে গেছে।
ভাবো,এ ভাবে চললে নদীর
স্রোতধারা হারাতে কি সময়
লাগে?শরীরকে মাটি,কাঁকর
ও পাথরে ঘষে-ঘষে কিছুদূর
যেতে না যেতে অশ্রু ঝরতে
শুরু হলো তার দু’চোখে।
তারপর?নির্ঝরে স্বপ্নভঙ্গ হতে
আর কি সময় লাগে?
বাঁশীবাদকের সুরেলা বাঁশির
দৌলতে ব্যাপক চোরা স্রোত
এসে তার প্রাণ-ভোমরা কে
নিয়ে বন্দী করলো অদৃষ্টের
কারাগারে।
হায় রে,এ জীবনে কত কী
ঘটে।স্রোত হারা তটিনীর বাঁকে
বাঁকে পাঁকের শয্যায় জমলো
শ্যাওলা।বিলম্বে হলেও বুঝলো
শেষে বাঁশি-ওয়ালার ছলাকলা।
বড়ো বিলম্ব হলো নাকি?সূর্য
অস্ত যেতে আছে কি বাকি?
নদীর অন্তর তখন চিঁর ধরা
আরশির মতো,বাঁশি ওয়ালার
প্রতি ঘোরতর অবিশ্বাসে।
জীবন যন্ত্রণায়,জমাট কালো
রক্তের মতো নৈরাশ্য,নদীর
তারুণ্যের হৃদয়-যন্ত্রেও
বাঁধলো বাসা।
এখন শোনা যায় না আর
নদীর কল ধ্বনি,বাজে না
বীণ।
দুর্দিন দুয়ারেই কড়া নাড়ে।
ঘোর অমাবস্যার অন্ধকারে
সারারাত ধরে,ঝোপে ঝাড়ে
বসে বীত রাগে যেন বিনিদ্র
ঝিঝিরাও শোনায় অবিরাম
প্রলয় সঙ্গীত।