প্রায় চল-শক্তিহীন। হাতের লাঠি একমাত্র সম্বল।
অনর্গল একান্তে এক আমড়া গাছের নীচে বসে
নিশিকান্ত করছে বিড়বিড়।
অধীর আগ্রহে কান পেতে শুনতে চেয়েছি কী
বলছে? বলছে, ‘বোঝোনি পাখি কষ্টটা তোমার
একার কি? সব স্বপ্ন হলো মিছে।
যাক গে, আবারও বেরিয়েছি পথে, পথ খুঁজে
নিতে’। আবার যাবো প্রবাসে বৃদ্ধ বয়সে।
হায় রে, হেমন্তে হলো কী? ডাকে না কোকিল।
বরং সারা আকাশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চিল।
চারদিক মেঘে আচ্ছন্ন, অকালে দেখা দিলো কী
অনাসৃষ্টি? দু’চোখে তার ঝাপসা দৃষ্টি’।
যৌবনে পোষ মানা পাখি ‘বউ কথা কও’ বললে
সাড়া দিতো। কোলের কাছে এসে বসতো। সুখ
দুঃখের কথা হতো।
বাদ সাধলো বেকারত্ব। লক ডাউনে নিশিকান্ত
কাজ হারালো। ঘরে ঢুকে পড়েছে লাগাম ছাড়া
দরিদ্রতা।
সেটি দু’হাতে ঝাঁকুনি দিলো তাদের তাসের ঘর।
ভেঙ্গে না-পড়লেও সে ঘর করেছে মরমর।
পাখি নিশিকান্তর উপর সেদিনও নির্ভর করেছে  
সুদিনের আশায়।
সেও ভাবতো দিনে রাতে, ‘কী করবে অভাব
ঘুচিয়ে পাখিকে সুখে রাখতে’?
ভাবনার জটাজাল থেকে টপটপ করে গড়ালো
জল অনর্গল।
মাঝ রাত। চারিদিক শুনশান। বাতাসে কান
পাতলে কোনও শব্দ ভেসে আসে না কানে।
বিহ্বল দৃষ্টিতে সে দেখলো চেয়ে পাখি ঘুমিয়ে
পড়েছে।
তার বেঁচে থাকার সব বন্দোবস্ত করে পরদিন
সে ভাগ্যান্বেষণে গেলো বৈকুন্ঠপুর, দূর দেশে,
জীবন জীবিকার পথ খুঁজে নিতে।
চাইলেই কি সহজে সব জোটে? প্রবাসে দাঁতে
দাঁত চেপে সে করেছে জীবন সংগ্রাম। ঝরালো
বহু ঘাম।
প্রায় অসাধ্যসাধন। যখন করতে পারলো সব
বন্দোবস্ত, ভাবলো সে এবার ভাগ্যের চাকাটি
ঘুরবে বনবন।
রাতে বিছানায় শুয়ে রোজই বুনেছে সুখের
স্বপ্নজাল। ধরেছে সংসারের হাল। ভেবেছে,
পাখির দুঃখ কষ্ট থাকবে না আর।
কে জানতো, কী ইচ্ছা বিধাতার?
সব সময় প্রবাসীর মন উড়ুউড়ু, কবে ছুটি
পাবে? ঘরে ফিরবে কবে?
স্বপ্নে বিভোর। দেখছে, সে ফিরে এসেছে।
উঠানে দাঁড়িয়ে ‘বউ কথা কও’ বলার সাথে
সাথে পাখি জানালা দিয়ে মুখ বাড়ালো, ছুটে
এলো’। আনন্দে বুকে জড়ালো।
সেই দিনের অপেক্ষায় কেটেছে বহু বছর।
ছুটিতে গ্রামে ফিরে এসে হতবাক! ডাকলে
পাখি কেন দেয় না সাড়া? হাঁকডাক করে
জাগালেও সারা পাড়া?
তবে হলো কী? ঝিম ধরলো সারা শরীরে।
ঘরে ঢুকে দেখলো শিয়রের বালিশের নীচে
সুদীর্ঘ পত্র।
ছত্রে ছত্রে দাউ দাউ করে জ্বলছে পাখির
অভিযোগের বহ্নিশিখা।
আগুনের হলকায় নিশিকান্ত পড়লো সেই
পত্রখানি।
তাতে লেখা, ‘মেটাতে পেরেছো কি যৌবনের
চাহিদা? তাই তোমার মুখ পুড়িয়ে এই খাঁচা
থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি’।
আর দেরি নয়। সেও বেরিয়ে পড়লো।