কেন যে টানে ভাষার বাঁধন অকারণ
মাগো,আমার আপন হৃদয় মাঝে যখন
স্বপ্ন রাশি হেলে দোলে
ফুলের মতো পাপড়ি মেলে
তোমারি ভাষা মনে জাগায় আলোড়ন।
মনের গহিনে জাগে সুমধুর স্পন্দন
তুমি সীমা হীন আনন্দে দেখো তখন
আমি ঠায় বসে সেথায়
তোমার দানে তোমার ভাষায়
সস্নেহে তাদের যত্নের করি আয়োজন।
মাগো!জীবন যুদ্ধে ঘাতে-প্রতিঘাতে
বা স্বজন বিয়োগের মতো যন্ত্রণাতে
মনের ভিতর বাঁধে কত
বিরহ বেদনার ক্ষত
কর্কটের মতো ক্ষয় করতে দিনে রাতে।
সেই দুর্দশায় সংজ্ঞা হারাই রাতবিরাতে
জানি না ওরা কোন অশনি সংকেতে
মনের ভিতর আঁকড়ে বসে
প্রাণের নির্যাস টুকু শুষে
রাক্ষসের মতো চায় আমাকে গিলে খেতে।
আমাকে নিয়ে যখন তোলে বলি কাঠে
মাগো!তখন তোমার এই ভাষার দৌলতে
আমার দুঃসময় হয় বিদায়
ওরা ও ধুয়ে মুছে যায়
যেন বানে কূল ছাপানো নদীর স্রোতে।
বসন্ত যখন মন ছুঁয়ে যায় সোহাগে
তার স্নেহ-লতা যখন মোর মনে লাগে
পলাশের আগুনে স্নাত
উদাস বাউল শত শত
তোমারি ভাষায় গান গাইতে রাতদিন জাগে।
শোক দুখে যখন ভাসি অকূল সাগরে
তখন তোমারি লালন গীতির জোয়ারে
উল্লাসে ভাসে মোর মন প্রাণ
ইহা যে তোমার অশেষ দান
তাই কোন ক্লান্তি থাকে না মোর শরীরে।
মাগো!তুমি তো জানো তোমার এদেশে
স্বদেশী গানের বন্দনায় জনগণ ভাসে
বহে কী আনন্দ ধারা
আবাল-বৃদ্ধ-বণিতারা
এসব গান শুনে ছন্দে দোলে উচ্ছ্বাসে।
মাগো!এই জগতে বাঁচবো যে কত দিন
তোমার এই ভাষাকে রাখবো মনের গহীন
প্রাণ দিয়ে ও করবো লালন
দক্ষ কোন মালীর মতন
মনোমন্দিরে পূজিব গো চিরদিন।
মা!দেখবে তোমার পাশে আছে নৌ-জোয়ান
উচ্চ শিরে তুলে ধরবো তোমারি মান
ভাষা শহীদদের আশিসে
মৃত্যু ভয় সব ঘুচে গেছে
সগর্ভে বলো,' আমার সন্তান বীর-জোয়ান'।
মাগো!যদি হানাদার রা হানে আঘাত
করতে চায় যদি তোমার ভাষাকে লোপাট
দেখবে ওদের ঠাঁই দেবো না
শত্রুর রক্তে ভাসবে যমুনা
বিজয় পতাকা নিয়ে ফিরবো বীরের জাত।
মা!তোমার সব ভয় ভাবনা সরিয়ে ফেল
তোমার সেই অশ্রু ঝরা দুখের দিন গুলো
আর ফিরবে নাকো কোনদিন
সুখে কাটাবে চিরদিন
মা!এবার বিগত দুর্দশা সব ভুলো।