ভেঙেছে মেরুদণ্ড। বুকের পাঁজর, সেও।
ক'টা পাঁজরের হাড় ঠিক আছে, বলাও দুষ্কর।
সমাজ এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে
রোগ শয্যায় শুয়ে রোগীরা যন্ত্রণায় যতই করুক চিৎকার
কার কী আর যায় আসে?
পাশাপাশি রোগীদের দুর্দশা এমনি যেন তারা বন্য শিম্পাঞ্জি!
পাড়াপড়শী, এমনকি দূরদূরান্ত থেকেও বহু লোকজন
রোজ তাদের দেখতে আসে।
তাদের পাশে বসে ছুড়ে দেয় নানান প্রশ্ন বাণ
অনেকে পরখ করেও দেখতে চায়
ভেঙেছে ক’টা পাঁজরের হাড়, মেরুদণ্ডের ক’জায়গায়।
প্রশ্ন করে, সেসব ভাঙলো কিভাবে?
কার্য-কারণের গভীরে না-গিয়েও
রোগীদের কাঁধেই একতরফা সব দোষ চাপিয়ে দেয়।
অনেকেই বলে, গাছে চড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে
পাঁজর ভাঙলে দোষ কার?
অন্যায় কাজ জেনেও গর্হিত কাজ করলো কেন?
যথার্থ প্রশ্ন! এ-কাজ শাস্তিযোগ্য, সেও সত্য
কিন্তু কেউ ভাবে না তাদেরকে এ-কাজে
কেউ বাধ্য করলো কিনা? নয়তো এ কথা বলে বসে
কেউ বাধ্য করলেই কি এ-কাজ করতে হবে?
এ বক্তব্য সর্বৈব সত্য, আপাত দৃষ্টিতে,
কিন্তু পরিস্থিতি ঘোরালো হলে তারা কী করতে পারে?
সমালোচকরা জানে নাকি ঘোরতর দুর্দশায়
বাঘে গরুতেও এক ঘাটে জল খেতে বাধ্য হয়।
'শিক্ষা', বরাবর পরিসেবার তালিকায়
অবৈতনিক শিক্ষা পরিসেবা এখন পাওয়াও দুষ্কর
প্রচুর অর্থ ব্যয় করে এখন শিক্ষা কিনতে হয়
সন্তানদের অনেক অভিভাবক এ পরিসেবা কিনতে অপারগ
তাদের সন্তানদের পড়াশুনা গুটিয়ে নিতেও বাধ্য হয়।
বাকিদের ক’জন সচ্ছল? স্বচ্ছন্দে সে ব্যয়ভার বইতে পারে?
নিতান্তই নগণ্য।
বাদবাকিদের অনেকের এই ব্যয়ভার বইতে গিয়ে
খসে পড়ছে তাদের বুকের পাঁজরের হাড়।
সামান্য রোজগার, তবু মিতব্যয়ে সংসার সামলে
সাশ্রয়ী অর্থ এবং সঞ্চিত অর্থ ও সম্পদের বিনিময়ে
তারা চেষ্টা করে এই পরিসেবা কিনতে
যেন তাদের সন্তানদের শিক্ষায় ব্যাঘাত না-ঘটে।
তারা সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে থাকে
কবে লেখাপড়া শিখে নিজেদের যোগ্যতায়
চাকরি জুটিয়ে নিয়ে সংসারের ধরবে হাল!
বেহাল দশা, এ সময় সমাজের হলো কী!
গলায় দুর্নীতির ফাঁস লাগলো নাকি?
চাকরির নিয়োগে দুর্নীতি,
যোগ্য প্রার্থীরাও হলো নাকি পরিস্থিতির শিকার?
অনেকে পরীক্ষায় সফল হয়েও অর্থ-সম্পদ সর্বস্ব
হাতছাড়া করে চাকরি কিনতে বাধ্য হলো।
বাদবাকি, যারা সেটি কিনতে অপারগ
কিবা ঘুষের অর্থ যোগাতে অনিচ্ছুক
তারা আজও রাজপথে, করছে লড়াই সংগ্রাম।
ভাবতেও কষ্ট হয়,
যেখানে চাকরির নিয়োগে অর্থই প্রধানত বিবেচ্য
সেখানে প্রার্থীদের যোগ্যতা প্রাধান্য পায় কি যথাযথ?
নলবাহী স্বাদু পানীয় জলের নলে ছিদ্র হলে
সেই জলে পাঁক মিশবে না, সে কি হয়?
বহু অযোগ্যও নিয়োগপত্র পেল টাকার বিনিময়ে।
চাকুরীর নিয়োগ দুর্নীতিতে সমাজ ছেয়ে গেলে যা হয়
ঘটনাগুলো এখন আসছে আলোয়
যোগ্য-অযোগ্য যারা অনৈতিকভাবে চাকরী জুটিয়েছে
তারা সবাই এখন যেন হাড়িকাঠে বলির পাঁঠা
কে আর তাদের কথা শোনে, ‘কেন ঘুস দিতে হলো?’
তাদের-ই ভাঙলো মেরুদণ্ড ও পাঁজরের হাড়
তারা এবং রাজপথে যারা আজও করছে অনশন
এখন তাদেরও দুর্ভোগের অন্ত নাই।
সমালোচক যারা পড়েনি এই ঘূর্ণিপাকে
তারা নৈতিকতা ও অনৈতিকতা নিয়ে তর্কবিতর্ক করে।
ভাবে না তারা, প্রশ্নটা ছিল মূলত বাধ্যবাধকতার।
এখন সমগ্র শিক্ষক সমাজ সন্দেহের মুখোমুখি
কে জানে, কিভাবে তারা এ গ্লানি থেকে মুক্তি পাবে?
এখন দেখার, যাদের ভাঙলো হাড়
তাদের হবে কি যথাযথ চিকিৎসা?
এ কাজে যথাযথ উদ্যোগ নিলেও ভাঙ্গা হাড়গুলো  
ঠিক ভাবে জুড়বে কিনা, সেও বলা দুষ্কর।