যুগ-যুগান্তর,
এ বিশ্ব ছেড়ে গেছে কত শত-সহস্র কোটি।
বিস্ময়কর! এ পথে কেউ ফেরেনি আর
জানি না, কেন? কোথায় অন্তরায়?
নির্দ্বিধায় বলা যায়
তাদের কেউ যদি এ পথে ফিরতো
তবে জানা যেতো, 'মৃত্যুর পর আত্মার কী
পরিণতি হয়'।
কিন্তু এ পথে কেউ না-ফেরায়
সাক্ষীর অভাবে সে আর হওয়ার নয়।
অগত্যা ইথার মাধ্যমের অস্তিত্ব খোঁজার মতো
দর্শনশাস্ত্রের সাহায্যে যুক্তিনির্ভর অনুমান
ও যুক্তি-তর্কের সাহায্যে ধারনা করা ছাড়া
কোনও বিকল্প রইলো না
মৃত্যুতে প্রাণের অস্তিত্বের শেষ কিনা!
যদি এ পর্যায়ে তার পরিসমাপ্তি না-হয়,
আর জন্মান্তরের মতবাদ মেনে চক্রাকারে
বারবার যদি এ বিশ্বে ফিরে আসতে হয়
তবে,হাঙরের মতো বিশ্বের সম্পদ আগ্রাসী
মানুষদের জ্ঞাতার্থে বলতে ইচ্ছা হয়,
‘হে চির পথিক!এ ধরাধামে এসে
ভিটেমাটির স্থায়ী দখলদার হওয়ার চেষ্টা
কি একেবারে অবান্তর নয়?’
মৃত্যুর পরেও ভবঘুরের মতো চলতে গিয়ে
এ বিশ্বে আবারও যদি এ প্রাণের সঞ্চালন
হয়, তবে এ কথা বলা কি অমূলক,
‘হে চির পথিক!বলো,কেউ কি যুক্তিনির্ভর
হয়ে খুঁজে পাবে বিশ্বের কোথাও কোনও
স্থায়ী বসত ঘর?’
যদি এমন হয়, বিশ্বচরাচর পরিক্রমার পথে
কালের মানদণ্ডে দু’দণ্ড পদ্মপাতায় শিশিরের
আশ্রয়ের মতো এ বিশ্বে সকলকে স্থান করে
নিতে হয় আর মরণের সাথে সাথে এ-প্রাণ
শিশিরের মতোই উবে যায়,এই ভাবনা যদি
ফুলের কুঁড়ির মতো মনে জাঁকিয়ে বসে
তবে জানতে ইচ্ছা করে পদ্মপাতার প্রতি
শিশিরের আসক্তি কতখানি?
বিস্মিত হতে হয় বৈকি, এ ব্যাপারে যখন
দেখি অনেকে নিরুত্তর।
বলার অপেক্ষা রাখে না,অনেকে ভাবতে পারে,
‘এ মিছে ভাবনা, অন্ধকার কুটিরে যেন
এক কালো বিড়ালকে খুঁজে বেড়ানো!’
ভাবি,অবসরে কল্পনার জগতে একটু-আধটু
ঘুরে বেড়াতে ক্ষতি কী?
পথিককে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা হয় বৈকি,
‘যুগ-যুগান্তর এ ভাবে চলার পথে
ক্ষণিকের অবকাশে এ ভিটের প্রতি আসক্তি
জন্মানোর কোনও হেতু থাকতে পারে কি?
শিয়রে উঠতে হয় যখন দেখি পদ্মপাতার
প্রতি স্ফটিক জলের নেই কোনও আসক্তি।
এ বিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব যদি পদ্মপাতায়
ভাসমান স্ফটিকের মতো অস্থায়ী হয়,
তবে বিয়োগান্ত নাটকের মতো
এ প্রাণের স্থানচ্যুতি হতে পারে না কি
যে কোনও সময়?
আর এ বিশ্বে সুখের বাসনা?
কে,খুঁজে পাবে তার ঠিকানা।
কেননা, সেটি যে আসক্তি!- নেই কি জানা?
জীবন টলমল,পদ্মপাতায় স্ফটিকের মতো!
মৃত্যু? এ শুধু সময়ের অপেক্ষা,
রেফারির বাঁশি বাজলেই সকলকে এই পৃথিবী
ছেড়ে চলে যেতে হয়,এর অন্যথা হওয়ার নয়!
ভোগের বিষয়-আশয় পড়ে থাকে নিশ্চল।
মরণে কে,কবে সাথে করে বিষয়াদি
নিয়ে যেতে পেরেছে কখনও?