দেখেছি এক বৃহৎ জলাশয়ের তীরবর্তী    
প্রান্তিক একটি পরিবারের বেহাল দশা।
অত্যাচারী তুঘলক বাদশার মতো দারিদ্র  
সে সংসারে দাপিয়ে করছে রাজত্ব।          
জেনেছি দৈনন্দিনের মতো একদিন গৃহস্থ
রমণী স্বামী ও শিশুকন্যার খাবার শেষে
অবশিষ্ট যা কুড়িয়ে পেল হাঁড়ির তলদেশে
সে খাবার চেটেপুটে খেয়ে ঘষামাজা করে
রান্নার হাঁড়িও ধুয়ে রাখলো।
তারপর? ঢক ঢক করে দু'গ্লাস জল গিলে
রাতে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
দরিদ্রদের ঘরের হাঁড়ির হাল! তার ঘরে
খাবারের প্রাদুর্ভাব। এ শিশুকন্যার জন্য
অল্পবিস্তর খাবার, সেও ছিল না।
সকালে স্বামী বেরোলো অর্থ রোজগারে।
ভাবলো দারিদ্রে মাকড়সার জালের মতো
বন্দী দশায় অসহায় রমণী করবে কী?
স্বামী ঘরে ফিরলে কি দিয়ে যোগাবে সে
দু’মুঠো অন্ন?
বন্যের মতো সে চিন্তা যখন তার মগজ
ছিঁড়ে খেলো, রমণী বাধ্য হয়েই বাইরে
বেড়িয়ে অগত্যার গতি পতিত জমি থেকে
কিছু নটেশাক কুড়িয়ে আনলো।
তারপর? শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে সে
গেলো সেই জলাশয়ের তীরে। আটপৌরে
শাড়ি পড়নে, কোলে একরতি সেই মেয়ে
অপুষ্টিতে লিকলিকে চেহারার।  
শিশুর এমনি অবস্থা। পড়নে সাদাসিধা
ঘরোয়া পোশাক। হাতে এক গাছা ছোট্ট
কাচের চুড়ি, দু’পায়ে স্বল্প মূল্যের দুটো
রূপার মল।
অশ্রুসজল চোখে রমণী শিশুটিকে কোলে
নিয়ে পাঁকে খুঁজছিল গেঁড়ি গুগলি। জলে
চড়ে বেড়াচ্ছিল কিছু বালি হাঁস।
সূর্য অবিরাম গতিতে অচিরে পৌঁছে গেল
মধ্য গগনে। মা-মেয়ের খিদে তার সাথে
পাল্লা দিয়ে তাদের ধরছে কষে।
হায়রে, এমনি অবস্থা হলে একরতি শিশু
কত আর সহ্য করতে পারে?
কেঁদে উঠলো সে খিদের তাড়নায়, হাত-পা
ছোঁড়াছুড়ি করায় ঝনঝন শব্দও হলো।
দেখেছি এ ঘটনা নজরে এলো এক নুরিয়ার
কর্মে বীর, হাবভাবে যুধিষ্ঠির। জলাশয়ের
তীরে ছিল সে জলে ডুব দেবার অপেক্ষায়।
শিশুদের ক্রন্দন কি সহজে ভোলা যায়?
এ দৃশ্য দেখে কে আর চুপ করে থাকতে
পারে?
দেখেছি ডুবুরি পা বাড়ালো সেদিকে। কোলে
তুলে নিলো শিশুটিকে। কান্না থামাতে চেষ্টা
করলো। একটা নেড়ি বিস্কুটও তার হাতে
দিলো।
তারপর? তাকে মুক্তো এনে দেবে বলে তার
মায়ের কোলে দিয়ে জলাশয়ে ঝাঁপ দিলো।
ছলাৎ শব্দ করে জলে ঢেউ উঠতেই হতভম্ব
শিশু। ভাবলো হলো কি! অপলকে দৃষ্টিতে
চেয়ে রইলো জলাশয়ে হচ্ছে কী! মুক্তো নিয়ে
ভেসে উঠছে কি ডুবুরি?
দেখেছি কিছু সময় পরে বহু মুক্তো-সমৃদ্ধ
ঝিনুক নিয়ে ডুবুরি তীরে উঠলো বটে তবে
বহুদূরে।
তারপর? শিশুটির দিকে ফিরে তাকালে না।
হনহন করে হাঁটতে শুরু করলো নিজ ঘরের
দিকে।
এ ঘটনা মনে দিলো সুড়সুড়ি। ধীর-স্থির হয়ে
বসে ভেবেছি তখন এই কি এ যুগের বাস্তব
পরিস্থিতি? ঝরছে কি অ্যাসিড বৃষ্টি?
এ কাজ করে বেড়াচ্ছে কি এ যুগের ধর্মপুত্র
যুধিষ্ঠির?