ভাবতে অবাক লাগছে কি জোয়ার ভাটার
মতো পরিবর্তনের ঢল নিয়ত আছড়ে পড়ছে
দেখে?এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে
চিরকাল পাহাড় থেকে ঢালুর দিকে গড়াবে
জল।এ অবস্থায় পরিবর্তনের ঢেউ সমাজে
আছড়ে পড়বে না সেকি হয়?
বলি,‘ঋতুদের সহযাত্রী’রা করছে কী,সেটি
দেখবে নাকি? তাদের কথা ভাবতে পারো,
বৈকি! ব্রাহ্মনদের বিধান মেনে বিবাহ পর্ব
শেষ হলে আগে পালকিতেই চড়ে মাথায়
ঘোমটা টেনে শ্বশুরবাড়ি যেতো নববধূ।
শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিয়ে তাকে পতিগৃহে
স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকতো অগণিত
পল্লীবধূ।
যন্ত্রবাদকেরা কি আর চুপ করে থাকতো?
তারা সে সময় সানাই,বাঁশি ও বিউগল
নিয়ে পথে পথে ও সেই পতিগৃহে পৌঁছে
আনন্দ লহরি তুলতো অনর্গল।কুমারীরা
সহ পল্লীবধূরা হাসি ও উল্লাসে সারাক্ষণ
জমাতো আসর।
হরপার্বতীর মতো নবদম্পতি ফিরে গেলে
কী কাণ্ড না ঘটতো সেখানে।সেই নববধূকে
দেখতে নামতো পাড়াপড়শিদের ব্যাপক ঢল।
ভাবো,চির পরিচিত সেই সব দৃশ্যের সাথে
সাযুজ্য রেখে বিগত দিনে গ্রাম বাংলার কৃষিজ
ফসলকে নব উল্লাসে স্বাগত জানাতে কিভাবে
মানুষ উৎসুক হতো?
ঋতু ভিত্তিক ফসল ঝিঙে,মুলো,উচ্ছে,পটল,
কফি,টমেটো,বেগুন,লাউ সহ আরও কত কী
বাংলার ঘরে ঘরে কিভাবে সমাদৃত হতো!
অগ্রহায়ণে নবান্ন উৎসবের কথা গ্রাম বাংলায়
আজও ভোলা যায় কি?
পরিবর্তনের ঢেউ আছড়ে পড়ার ফল দেখছ
এখন?সর্বত্র পৌঁছেছে চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তি।
দেখো,সব ফসল সকল স্থানে উৎপন্ন করার
চেষ্টা চলছে বারোমাস।পাশাপাশি হাটে বাজারে
দূরদূরান্ত থেকে আসছে আমদানি করা অজস্র
কৃষি পণ্য।বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সংরক্ষণের কারণে
সেসব সহজলভ্যও হচ্ছে সারা বছর।
এবার বলি,এ সবের পরিণতি ভাবছো কি?
ঋতু-ভিত্তিক ফসলের প্রতি মানুষের ঔৎসুক্য
আর থাকছে কোথায়?
এ যেন হারিয়ে গেছে অস্তমিত সূর্যের মতো।