তন্দ্রাচ্ছন্ন, মুদিত নয়ন। স্বপ্নবিলাসে মজেছি তখন।
জানি না, কে কখন শিয়রে এসে দাঁড়িয়ে  
মাথার বালিশে দিলো টোকা।
বোকার মতো হকচকিয়ে উঠে
চোখ মেলে চেয়ে দেখি,
সামনে কিবা আশেপাশে কেউ নেই।
সেই যে সে লুকলো, আর দেখা দিলো না।
মনে জিজ্ঞাসা জোরালো, ‘সে কোথায় গেল?’
না-পেয়ে তার হদিস, ভেবেছি সে ভারী দুষ্টু,
হয়তো খেলছে লুকোচুরি।
তড়িঘড়ি উঠে বসে ভেবেছি, ‘কী করি?’
মনে হলো, কে যেন বলছে মেঘের অন্তরালে থেকে
‘এখনো শুয়ে বসে কাটাচ্ছ কেন?
শুয়ে বসে থাকা নয়, দাঁড়িয়ে থাকা নয়,
হাঁটা-ও নয়, ছোটো’।
বাধ্য ছেলের মতো উঠে দাঁড়িয়ে ছুটতে
শুরু করেছি করিডোর ছাড়িয়ে মাঠে,
অলি গলিতে ও প্রশস্ত পথে
বিশ্ব সংসারের সঙ্গে পাল্লা দিতে।
এ সময় কত কী ঘটে, দিনে ও রাতবিরাতে!
বাদ যায় না হোঁচট খাওয়া, মুখ থুবড়ে পড়া-ও।
বললো সে, ‘ছোটো আরো জোরে, আরও।’
ছুটেছি, যত জোরে পারি,
তবুও তার সন্তুষ্টির সীমারেখা ছুঁতে পারিনি।
বলতে দ্বিধা কী? বোঝেনি সে,
আমার দৌড়নোরও সীমাবদ্ধতা আছে।
তার ভাবখানা, ‘সেসব শুনছে কে?
রকেটের গতিতে ছুটলেও হবে না,
ছুটতে হবে আরও জোরে, আরও’।
বললো সে, ‘ দেখো, কিভাবে ছুটছে বিশ্ব-সংসার।’
নিজের দৌড়নোর সীমাবদ্ধতার কারণে
সে গতি ছুঁতে পারিনি,
তার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছি।
যখন এ সংসারের থেকে পিছিয়ে পড়েছি
জিজ্ঞাসা ঠক ঠক করে কড়া নাড়লো মনোদুয়ারে।
মনে হলো, ‘তবে সে কি আমার অক্ষমতা?’
বললো সে মেঘের অন্তরালে থেকে
‘বাঁচতে হলে ছুটতে হবে বিশ্ব-সংসারের
সাথে পাল্লা দিয়ে, অভিযোজনের বাধ্যবাধকতায়।’
চিন্তামণি যদিও ছুটতে চেয়েছিল, দেহ দেয়নি সায়।
পারিনি, ছুটতে অক্ষমতার কারণে।
যখনি হার মেনেছি, শুনেছি পরবর্তী প্রজন্মদের তিরস্কার।
মনে হলো যেন হারিয়ে ফেলেছি বাঁচার অধিকার।