শোনো,সেদিন সময়-সরণী দিয়ে যাচ্ছি।
সেসময় হঠাৎ একটি যৌথ পরিবারের
ক’জন সদস্য যেন সুদূর থেকে প্রগতির
কোনও আহ্বান শুনে নেশাগ্রস্তদের মতো
ছুটে চলছে নবতম সংস্করণের নতুন
মাইলস্টোনে পৌঁছে সেখানে একা একা
থাকার অভিলাষে।
তারা যখন একটি পাহাড়ের ঢাল বেয়ে
নেমে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে লক্ষ্যের দিকে,
সেসময় এক মাইলস্টোনের কাছাকাছি
তাদের সাথে আমার দেখা হলো।
দেখেছি তখন সেই মাইলস্টোনের ফলকে
বড় বড় হরফে লেখা ছিল,‘একক ছোট
পরিবার সুখী পরিবার,নবতর সংস্করণ’।
তাদের সেখানে দেখেই জিজ্ঞেস করেছি
বয়স বত্রিশ এর কাছাকাছি হবে এমন
একজনকে,‘কোথায় যাচ্ছো,শুনি’?
সে আমার সেই কথা শুনেও শোনেনি
এমন ভাব করে শশব্যস্ত হয়ে আমার
পাশ দিয়ে বেশ কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে
সেখান থেকেই চিৎকার করে বললো
আমাকে,‘শুনুন,আপনার সাথে দু’কথা
বলারও সময় ছিলো না আমার।রাগ
করবেন না,সেই দেখে।খুব ব্যস্ত আছি।
যাচ্ছি নব দিগন্তে,শেষ মাইলস্টোনে।
আমিও খুব জোরে ছুটে তাকে ছুঁয়ে
ফেলেছি সেথায়।
পরে জেনেছি তারা সকলেই জীবনে
চরম ‘সুখ-শান্তি এবং স্বাধীনতা’
চাওয়া-পাওয়ার তাগিদেএই সময়
কড়ায়-গণ্ডায় হিসাবটা বুঝে নিতে
‘একক ছোট পরিবার সুখী পরিবার’
এই বিশ্বাসে হাসিমুখে যৌথ সংসার
ভেঙ্গে দ্রুত বেগে গন্তব্যে পৌঁছনোর
জন্য ছুটেছে।
তাদের গতিবিধি জানার ও বোঝার
আশায় আমি ছুটে এসে যখনি তার
কাছাকাছি,দেখেছি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস
ফেলে সে বললো আমাকে,‘বলবো কী,
আগের অনেক না-পাওয়া পেয়েছি
এবার।পিছন ফিরে একটু তাকানোর
অবকাশও ছিল না মোটে?
তাই সামনের দিকে ছুটেছি ঝড়ের
গতিতে।লাভ-লোকসানের খতিয়ান
জানতে চেয়ে সেসময় বলেছি তাকে,
‘লাভ ও লোকসান কতখানি হলো
বলবে কি?’
সে বেজার মুখে বললো সাথে সাথে,
‘হিসাব কষি না,কিসের বিনিময়ে
কী পেয়েছি ও কত কি হারিয়েছি।
দু’জনেই দেখেছি সামনে এক ফলকে
চকমকি দিয়ে লেখা, ‘একক –মা,
সুখের ঠিকানা,পরের মাইল স্টোনে’।
লেখাটি দেখেই বিশ্রাম না-করেই
দীক্ষা মন্ত্রের মতো অনর্গল সে কথা
‘একক –মা’ জপ করতে করতে সে
প্রগতির টানে এগিয়ে চললো ভীষণ
হাসিমুখে।
কৌতূহল বশত: আমি সেদিকে ছুটেছি
দ্রুত।অচিরে অল্প সময়ের ব্যবধানে
দু’জনে সেখানে পোঁছে দেখেছি একটি
মাইলস্টোনের গায়ে বড় বড় হরফে
লেখা সেই ঠিকানা,‘একক-মা,নবতম
শেষ সংস্করণ’।
সেখানে পৌঁছে ক্লান্তিতে ধরাশায়ী হয়ে
মুখ থুবড়ে পড়লো সে।চোট লাগলো
নাকে ও মুখে।রক্ত ঝরতে শুরু হলো
কপাল ফেটে।উঠে দাঁড়ানোর মোটেই
সাধ্য ছিল না তার।
দেখেছি একজন প্রবীণ  দাঁড়িয়েছিলেন
সেখানে।রমণীর এই দুর্দশা দেখে তিনি
তাকে হাতটি ধরে তুলে  রক্ত মুছিয়ে
দাঁড়ালেন পাশে।
সেই দৃশ্যটি দেখে মনে পড়লো তখন,
ভবানী পাঠক প্রফুল্লকে হিতোপদেশ
দিতে যেন এসেছেন।