‘কস্তূরী’ বয়ে বেড়াচ্ছ
তবুও পাগলের মতো দিগ্বিদিক ছুটছ?
এতোটাই বিভ্রান্ত?
হন্তদন্ত হয়ে ছুটছ? তবে ছোটো,
জোরে, আরও জোরে ছুটতে পারো
কেউ পিছন থেকে রাখবে না টেনে ধরে।
হায়রে, তবে ভুলে গেছো
মধু-কবিও ছুটেছিল ভাষার রত্নভাণ্ডারের খোঁজে
বিদেশীরাই তাকে সেই আকরের সন্ধান দিয়েছে।
দেশে ফিরে এসে লেগেছিলেন সেই আকরের খোঁজে
তার খোঁজ পেয়ে বুঝেছিলেন,
মাতৃভাষা বাংলায় কত সম্পদ লুকিয়ে আছে।
পাশ্চাত্য-ভাষা শিখতে ক্ষতি কি? অবশ্যই লাগে কাজে
তাই বলে এতোই উন্মাদনা?
মা-কে মা, বাবা-কে বাবা বলা যাবে না
ভাত, ডাল, সবজি, মাছ, মাংস সেও
ইংরাজি ভাষায় না-বললেও সুস্বাদু মনে হয় না।
যেসব বাঙালী কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী বিদেশে যাননি
কিংবা পাশ্চাত্য ভাষায় সাহিত্য, বিজ্ঞান বিশেষ চর্চা করেনি
জানি না, তারা ইংরাজি বলতে ও লিখতে আড়ষ্ট কিনা?
জানি না কোন ভাবনায় বিজ্ঞানী আচার্য সত্যেন্দ্র নাথ বসু
তাই নেমেছিলেন মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার কাজে,
এমন মতিভ্রম কি কারো সাজে?
তবে মাতৃভাষায় গরিয়ান এই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী
নেমেছিলেন মাতৃভাষায় বিজ্ঞান সাধনায়।
হতে পারে সে আজ ইতিহাস
অনেকের মনে হতেও পারে সে ছিল ভ্রান্তিবিলাস।
যাক গে, জানতে ইচ্ছা করে
আজও মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার উন্নতমানের পাঠ্যপুস্তক
লেখা হয়নি, পঠনপাঠন এবং গবেষণারও প্রসার
ঘটেনি কি উচ্চশিক্ষিত বাঙ্গালীর অভাবে?
নাকি এই বোধ থেকে ‘এর শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়ে কী হবে?’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে নিজেদের মাতৃভাষায়
উচ্চশিক্ষার বই লিখবে কে, কবে?
মাতৃভাষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ের
পঠনপাঠন ও গবেষণার দায়িত্ব কে নেবে?
কবে সামগ্রিকভাবে এই ভাষা চালু হবে
দৈনন্দিন ব্যবহারিক জীবনে, অফিসে-আদালতে?
ভাবতে হচ্ছে বৈকি
গরম চায়ে চুমুক দেওয়ার মতো বিদেশী ভাষায়
বুলি না-আওড়ালে ‘বাবু’র, থুড়ি ‘স্যর’
তকমা কি জোটে?
খেতে বসলে রাইস, মটন, চিকেন, শব্দগুলো
ঠোঁটে-কানে সংযোগ না-ঘটালে খাবারে তৃপ্তি মেটে?
মনে এই প্রশ্নও জাগে
মাতৃভাষায় কথোপকথনে কতটা ‘বাবু’ হওয়া যায়?
তারি সন্ধান করতে গিয়ে সাহিত্য-সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্রকে
হতে হয়েছে কি কম হয়রান?
নাজেহাল হলেও শেষে ‘বাবু’ পড়েছে তার জালে।
ক’জন আর তার 'বাবু' প্রবন্ধে
সেটি পড়তে আগ্রহী হয়েছে একালে?
যাক গে, কবিগুরু কেন যে বলেছিলেন
‘মাতৃভাষা-মাতৃদুগ্ধ সম?’
ম্যামি, ড্যাডি বলতে অভ্যস্তদের
এসময় হবে কি একথা বোধগম্য?
বঙ্গজননী! জন্মের পর তোমার সন্তানদের
মাতৃদুগ্ধ সম বাংলাভাষায় প্রথম কথা বলতে শিখিয়েছ।
তাদের মানুষও গড়তে চেয়েছ।
তুমি তোমার ভাষা নিয়ে আটপৌরে শাড়ি পরে
থাকো, তাতে কী?
বলি, তোমার সন্তানেরা ‘মানুষ’ হচ্ছে নাকি?