বললো বিদূষক, -হুজুর রাজা মশাই!
যাই বলুন দেশ ঘুরে দেখে এলাম
জনগণের মনে অসন্তোষ বাড়ছে
দিশেহারা তারা, এখন তেলে বেগুনের মতো জ্বলছে।
নিন্দুকেরা বলছে, একি পশুদের রাজত্বে বাস করছি?
ছিঃ ছিঃ, এ কথা শুনেই কান চেপে ধরেছি।
কে জানে, মুখ ফসকে বলবে আরো কত কী!
তবে দেখেছি মাছিও ভয়ে তটস্থ,
আর জনগণ? দহন যন্ত্রণায় যেন খুঁজছে নিদান
বনবন করে ঘুরে দেখেছি চারদিক শুনশান,
জান বাঁচাতে কেউ টুঁ-শব্দও করে না
মাছিও কানের কাছে ভনভন করলে
ভয়ে তারা কান চেপে ধরে।
ভাবে, যদি আজব জন্তুগুলো এসে
সাড়াশির মতো গলা টিপে ধরে।
ঘটনা প্রবাহ দেখে তারা এ-কথা বুঝেছে হাড়ে হাড়ে
ভোট এলে রক্তক্ষয় সহ কত কী ঘটতে পারে!  
শিরে সংক্রান্তি, এ জন্তুরা বন ছেড়ে লোকালয়ে এসে
ঘপ করে জনগণের গলা চেপে ধরতে পারে।
দেখেছি জন্তুদের,
দোর্দণ্ড প্রতাপশালী, গায় মেদ জমেছে খুব
ওরা লোকালয়ে এসে লুটে খায় ও দাপিয়ে বেড়ায়।
আর এসব হবেই না কেন?
বলছে লোকে, ওরা বদলেছে খাদ্য তালিকা
গিলতে শুরু করেছে ঘুষের টাকাকড়ি
নিজেদের মধ্যেও লাগছে কাড়াকাড়ি।
হুজুর, এসব পশুখাদ্য নয়,
তাই অনেকের-ই মনে ভয়
এসব খেলে ওদের কী জানি কী হয়!
ওদের এসব পরিহার করতে বলতে গিয়ে দেখেছে
ওরা শিঙ উচিয়ে তাদের দিকে তেড়ে আসে।
জনগণ বলছে, পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে
সুখশান্তির ভাবনা সামান্য যেটুকুও ছিল
সেও ভেঙে চুরে একেবারে চৌচির হয়েছে।
দেখেছি গণ্ডারদের শিঙ দেখলেও ভয়ে
জনগণের বুক যেন দুরুদুরু
দেখেছি তাদের সাথে দেখা হলে
সৌজন্য বিনিময় করতে গিয়ে
‘কেমন আছেন?’ তাদের জিজ্ঞেস করলে
‘হুজুর! খুব ভালো আছি’ এই বলে
তড়িঘড়ি সরে পড়তে চেষ্টা করে।
হুজুর, এ কাণ্ড দেখে ভেবেছি বসে
সে আর হবে না-ই বা কেন?
-কার ঘাড়ে ক’টা মাথা আছে?
দেখেছি একটু দূরে গিয়ে তারা চিৎকার করে
‘জয় জগন্নাথ’-বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।  
মন্দিরে গিয়ে ঠাকুরের সামনে দণ্ডবৎ শুয়ে বলে
‘ঠাকুর, এ মিথ্যাচারিতা না-করলেই নয়।
যা দিনকাল জীবন বাঁচাতে এটুকু করতেই হয়।
ঠাকুর, সে জন্য অপরাধ হলে মার্জনা করো’।