‘তমা’ তার জন্মের পর থেকে  
নিজের জন্মদাত্রী মাকে হারিয়ে
অতিশয় দুঃখকষ্টে বিদীর্ণ হয়ে  
তিলেতিলে বেড়ে উঠতে থাকে।                          
সন্তানের প্রতি বৈষম্যের কারণে
স্পর্শ করেনি সে মৃন্ময়ী মাকে।


নিয়ত কষ্টের হেতু না জানায়
অভিমানী হলো সঙ্গত কারণে।
শয়নে ও জাগরণে অন্তর্যামীকে      
জিজ্ঞেস করেছে সে বারংবার    
শৈশবকাল থেকে কেন তাকে      
হতে হলো নির্দয়তার স্বীকার?    


মৃন্ময়ী মায়ের সম্মুখে দাঁড়িয়ে      
প্রশ্ন করেছে সে গলা ফাটিয়ে      
যাদের জন্মায়নি বোধ-বিচার      
তারা পাপ-পুণ্যের অংশীদার?      
বছরের পর বছর কেটে যায়      
উত্তর সন্ধানে ব্যস্ত-ভাবনায়।      


কোন উত্তর না পেয়ে ভেবেছে      
মৃন্ময়ী উপেক্ষার পথে গিয়েছে
মাতৃস্নেহ থেকে নিয়ত বঞ্চনায়    
রাতদিন কেঁদেছে সে যন্ত্রণায়।
নিয়ত অর্ন্তদহন ও বিষণ্ণতায়      
মজলো সে ঘোর নাস্তিকতায়।    


হৃদয়-কুটির হতে প্রতিনিয়ত
তমার ক্ষোভ উদগিরণ হতো।    
সে জানে না,‘মা দিনে রাতে
কিভাবে খেলতো তার সাথে’।
ক্ষোভ-বিদ্বেষ ধায় সরল পথে      
গতি বাড়ে গুণোত্তর প্রগতিতে।    


একটি রাতে বিষয় পাঠ শেষে      
তমা-র শরীরটা বড়ো অবসন্ন,    
তন্দ্রা চুপিসারে তার আঁখিদুটি
পরশে হলো সে অতীব প্রসন্ন।
সে গৃহে অনুরণিত হলো তখনি      
অন্তর্যামীর গুরুগম্ভীর পদধ্বনি।      


তমার সম্মুখে এসেই অন্তর্যামী
শোনালেন তাকে অমোঘ বাণী।
বললেন, সব জন্ম-জন্মান্তরের
নিরবধি কার্য-কারণ ও ফলের
ক্রমিক বিন্যাসে ফলাফল আসে
সেই তালিকার একেবারে শেষে।    


মহারাজাদের কোষাগারের ধন    
কালক্রমে তাদের সঞ্চয় যেমন,        
জন্মান্তরবাদের নিরিখে কর্মফল
জন্মজন্মান্তরের পুঞ্জীভূত ফসল।
সেই ফল নিয়ে এগোনো রীতি
ভূমিষ্ঠ শিশুর সুখ-দুঃখের সাথী।


আত্মা অবিনাশী করলে স্বীকার  
পরমাদ ঘুচবে দিলেন অঙ্গীকার।
তমা বিনত হয়ে নব চেতনায়    
মৃন্ময়ীর কাছে বসলো প্রার্থনায়।