সেদিন কাকাতুয়া একটি অচিন
দেশকে ঠোঁট দিয়ে ইশারা করে
বললো,'গোধূলি বেলায় সে দেশে
কর্মযজ্ঞ দেখবে তো এসো।আসন
পেতে বসে দেখো,কর্মকর্তারা বেশ
পরিপাটি করে কোমর বেঁধে নেমে
পড়েছে দড়ি পাকানোর কাজে।
দেখছো তো পুষ্টিকর খাবার আর
ব্যাপক শরীর চর্চার সাথে সাথে
কাজে মনোনিবেশের ফলে তাদের
দেহের জৌলুস যেন ফুটে উঠছে
শরীরের ভাঁজে ভাঁজে।
বলো,তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে
হয় না কী,তারা ঈশ্বরের বরপুত্র
নয়তো বিশ্বকর্মা স্বহস্তে একেবারে
নিপুণ ভাবে তৈরি করেছেন এসব
দক্ষ কারিগর।শুনলে বিস্মিত হবে,
তাদের এই কর্মযজ্ঞ চলছে সারা
বছর।
দেখো,তারা দরিদ্র এবং অসহায়
মানুষদের জীবন যন্ত্রণাগুলি কে
কী সুন্দরভাবে দড়ির মতো পাক
দিয়ে পরিপাটি করে সেগুলোকে
ইন্ধন করে অরণ্য নিধনের মতো
কোনও বিশেষ উদ্দেশ্যে জ্বালাচ্ছে
দিবারাত্র।
বলছি,একটি বার তাকিয়ে দেখো
দরিদ্রদের দুঃখকষ্ট গুলি দাউদাউ
করে জ্বলছে যেন মশালের মতো
নিয়ত।
দেখো,এই কারিগরদের কারিগরি
কলাকৌশলে বাড়ছে সেই জ্বলনের
সময় সীমা'।
শুনেছি,আগে বর্গীরা নাকি এ ভাবে
মশাল জ্বালাতো যেই বাজতো যুদ্ধের
দামামা।
সেসব নিয়ে যখন ভাবছি,কাকাতুয়া
ঠোঁটটি দিয়ে ইশারা করে বললো,
'দেখতে পাচ্ছো কি,এখন বসুন্ধরার
অসহনীয় অবস্থা?শুনতে পাচ্ছো কি
তার বুক ফাটা কান্না'?
বলি,জানতে খুব ইচ্ছা করে,দেশের
স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে দেশবাসীর
আত্ম বলিদান অবশেষে গেলো কি
বিফলে?
জানি না,বেকার,দরিদ্র ও অসহায়
এই মানুষদের জীবনে দুর্ভোগ আছে
আর কত!দেখি,এতো দুঃখকষ্ট মুখ
বুজে সহ্য করার পরেও তারা যেন
আছে ভীরু খরগোশের মতো।
সে আবারও ফিরে আমাকে বললো,
'দেখো,কারিগরদের শিরোমণি অতি
দক্ষতায় দরিদ্রদের দুঃখকষ্ট গুলো
নিয়ে সারাবছর ভর দুমড়ে মুচড়ে
মণ্ডের মতো পাকিয়ে নিপুণ ভাবে
যাঁতা কলে পিষে তৈরি করছে কী
যেন একটি কাগজের মতো।
তারপরে কী করছে দেখছো কি?
দেখো,পটু হাতে সেটি দিয়ে নৌকা
বানিয়ে ছোট শিশুদের মতো হৈ হৈ
করে ছুটে যাচ্ছে যেন একটি শান
বাঁধানো পুকুর ঘাটে নৌকাগুলোকে
জলে ভাসাতে।দুর্দশাগ্রস্তরা দুঃখকষ্টে
ভাসলে কী যায় আসে তাতে?
বলছি দেখো,কী করে ঘাটে বসে?
দেখো,মধু-ভুক যেভাবে ফুলের মধু
খেয়ে গুণ গুণ করে গান গায়,সেও
তেমনি গান গাইছে আর জলে ঢেউ
তুলছে আনন্দে উল্লাসে'।
তার কর্মকাণ্ড দেখে মনে হলো শৈশব
কাটেনি এখনও।দেখছে নৌকাগুলো
জলে ভাসিয়ে,হেলে-দুলে এগিয়ে
কোনটি কত দূরে গিয়ে জলে যাচ্ছে
তলিয়ে।
কাকাতুয়া বললো শেষে,বুঝলে তো
দেশের জন্য কর্মযজ্ঞ কাকে বলে?