হে মহান গণতন্ত্র!
বলছি তোমাকে।জানি, তুমি এই বিশ্বে
অদ্বিতীয়।জেনে রাখো,তোমার মর্যাদার
উপরে পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে এক
গভীর সংকটে পড়েই তোমাকে লিখছি  
এই খোলা চিঠি।
শোনো,তোমাকে বলি,শৈশবে প্রজাতন্ত্র
দিবসের প্রভাতী স্নিগ্ধ আলোয় আমার
শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহাশয়েরা আমার হাতে
তুলে দেন এই দেশের জাতীয় পতাকা।
সেদিন তাদের মুখে শুনেছি মহান এই
দেশকে সুদীর্ঘকালের পরাধীনতার গ্লানি
থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে বীর শহীদদের
আত্মত্যাগের কথা।
হে মহান গণতন্ত্র!শোনো,সেদিন তারা
আমার মনে দেশমাতৃকার প্রতি গভীর
ভালবাসার বীজটি রোপণ করার পরে,
জানি না কেন,একটি অদ্ভুত শিহরণ
অনুভব করেছি দেহে ও মনে।
সেদিন সহপাঠী বন্ধুদের সাথে মিছিলে
পায়ে পা-মিলিয়ে চলার সময় সকলেই
করেছি দেশমাতার বন্দনা।সকলে মিলে
‘বন্দে মাতরম’ধ্বনিতে আকাশ বাতাস
করেছি আলোড়িত।
সতত অনুভূত হলো এই দেশমাতার
অফুরান আলিঙ্গন,তার চুম্বন।জননীর
মুক্ত বেণীর ঘ্রাণে,কী জানি,কীযে ছিল
সম্মোহনী!আমি হয়েছি তাতে মোহিত
ও স্নাত।
সেই শৈশবে,তারপর থেকে,তোমাকে
সুরক্ষা দিতেই যে নীতি ও আদর্শের
বীজ অঙ্কুরিত হলো আমারি মনের
ভেতর;যাদের মালীর মতো লালন
পালন করে চলছি জীবৎকাল,সে আজ
গভীর সংকটে কিনা জানি না।সবসময়
মনে হয়  সে যেন বক্ষপিঞ্জরের ভেতর
কারাগারে,বৃদ্ধ শাহজাহানের মতোই  
বন্দীদশায়।
হে মহান গণতন্ত্র!জেনে রাখো,তোমাকে
রক্ষা করার সাথে সাথে তোমার মুখে
হাসি ফোটাতেই নাগরিকের দায় কাঁধে
নিয়ে ভোটের দিনে ভোটকেন্দ্রে সুদীর্ঘ
লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘসময় প্রতীক্ষার পরে
শেষে কোনও ব্যক্তি-বিশেষকে নয়,নীতি
ও আদর্শকে মেনে কোনও দলের পক্ষে
জাগ্রত বিবেকভোট দিয়ে যথার্থ কর্তব্য
পালনের গর্ব অনুভব করি।
পরে বড়ো অসহায় লাগে যখনি শুনি
আমার বিবেক ভোটটি নিয়ে নির্বাচিত
প্রতিনিধি ঘটা করে হাসি উল্লাসে চলে
গিয়ে নামটি লেখালো আমার এ-যাবৎ
বিবেক বিরুদ্ধ ভিন্ন কোনও দলে।
হে মহান গণতন্ত্র!আজ কী আর বলবো
তোমাকে,বুকে ব্যথা লাগে যখনি দেখি,
সেই মানুষেরা তোমাকে একটা ঝাঁকুনি
দিতেও দ্বিধা-বোধ করে না।
হায় রে!একী অদ্ভুত ব্যাপার,দলত্যাগ
বিরোধী আইনও রক্ষা করতে পারে না
নটে গাছের মতো তোমাকেও মুড়িয়ে
দেওয়ার হাত থেকে।তাকে যেন হেয়
প্রতিপন্ন করতে চায় পাশ থেকে।
হে মহান গণতন্ত্র!অজ্ঞানতায় ভর করে
আজ এ প্রশ্ন করি।বলবে কি আমাকে,
আমার কোন অপরাধে বিবেক ভোটটি
হচ্ছে ছিনতাই?আইন প্রণয়ন এবং বহু
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গহনের সময় কেন
একটি দলের পক্ষে আমার অভিমতটি
চলে যাচ্ছে বিপক্ষে?
তাই বলি,দলবদলের এই খেলা বন্ধ
করতে গ্রহণ করো উপযুক্ত ব্যবস্থা।
জন-প্রতিনিধিত্ব আইনকে সংশোধন
করে দলত্যাগীকে তার পদ থেকেই
ইস্তফা দিতে বাধ্য করো।আবারও
সে জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছুক হলে
পারলে ফিরে আসুক নির্বাচনের
মাধ্যমে।