রাত কেটেছে অনিদ্রায়। ঘুম থেকে উঠতেও
হলো বেলা।  
চোখ খুলেই দেখি সামনে কাকাতুয়া। পাখি
কোত্থেকে হন্তদন্ত হয়ে উড়ে এসে বসলো
জানালার পাশে মরা আমড়া গাছের ডালে।
বলবো কী, দেশবিদেশ ঘুরে এসে আগেও
কালের স্রোতে উড্ডীন পাখি শোনাতো তার
অভিজ্ঞতার কথা। এ কাজ করতে কখনও
হয়নি অন্যথা। ভেবেছি পাখি হয়তো আবার
এ কাজ করতে এসেছে।  
দেখেছি ঠোঁটগুলো পালকে মুছে বললো সে,
‘এক দেশে ঘুরতে গিয়ে দেখেছি এক অর্ধনগ্ন
অশীতিপর বৃদ্ধকে। জীবনের দ্বার প্রান্তে এসে
বৃদ্ধ ঠেকেছে।
তার উন্মুক্ত কঙ্কালসার শরীর। স্পষ্ট গোনাও
যায় বুকের হার। পরিধানে শুধুমাত্র একখণ্ড
মলিন বস্ত্র।
বৃদ্ধের ঠিকানা প্রাসাদোপম এক অট্টালিকার
পাদ দেশে, উন্মুক্ত ফুটপাথে। মাথার উপরে
ছেঁড়া পলিথিনের ত্রিপল। রোদ বৃষ্টিও তাকে
ছুঁতে পারে অনর্গল।
ঘোর দুর্দশা স্বত্বেও বৃদ্ধ মান্যতা দিয়ে বুকে
আগলে রাখছে দেশের সংবিধান।'
দেখেছে পাখি বৃদ্ধের জীবনের সম্বল শতছিদ্র
একটা মলিন কম্বল আর মাথার কাছে রাখা
তোবড়ানো থালা ও একটা ফুটো ঘটি।
খানদান? বৃদ্ধ, বাবুদের বাড়িগুলোর পরিত্যক্ত
উচ্ছিষ্টে সে কাজ মেটাতে হয়েছে অভ্যস্ত।  
দেখেছে পাখি কষ্টে বিদীর্ণ বৃদ্ধের অন্তরের
দগদগে ঘা থেকে গণ্ডদেশ বেয়ে ঝরছিল
অশ্রুজল।
শুনেছে বিগত বছরগুলোতে ও সেই জল
গড়ালো অনর্গল। ভাবলো পাখি, ‘সে সব
ধরে রাখলে হয়তো বোঝা যেতো বৃদ্ধের
কষ্ট-ভার কত কলসি হতো’।
বৃথা ভাবনা। বৃদ্ধ সচেষ্ট হলেও  কাজটি কি
সম্ভব হতো? তার সম্বল এ ফুটো কলসিতে  
কি সে জল ধরে রাখা যেতো?
দেখেছে পাখি, ভোট আসন্ন। চারদিকে ছুটে
চলছে মিছিল। রাতে উড়ছে টাকাকড়ি।
গভীর রাতে নিকটে গাছের ডালে ঘুমন্ত পাখি
হকচকিয়ে উঠলো ক’জনের কথা শুনে।কানে
এলো তাদের কথোপকথন।
দেখলো তারা সেই প্রাসাদোপম বাড়ি থেকে
বেরিয়ে এসে বললো বৃদ্ধকে, ‘ বলি শোনো,
এ ভোটে তোমার ভোট আমাদের দিও।’
বলা ভালো, তারা এ কথা বলে চলে যাবার
সময় বৃদ্ধের এ জীবনের ক্ষত দিয়ে গড়ানো
জলের মূল্য চুকাতে কিছু টাকাকড়ি থালাতে
রেখে গেল।