প্রিয়তমা,
ঘুম থেকে উঠে চারদিকে চেয়ে দেখেছি,
রাত্রির অবসানে প্রকৃতিও উঠেছে জেগে।
দেখেছি অদূরে একটি পাহাড় ও বনভূমি  
করজোড়ে সূর্য-প্রণামও সেরেছে।
কুয়াসা-ঘোমটায় মুখ ঢাকা সেই প্রকৃতি
রমণীকে আবছা দেখছি এই স্থান থেকে।
তুমি এখন যদি এখানে থাকতে,নিশ্চিত
এই মনোরম দৃশ্য দেখে কল্পনার ডানা
মেলে মেঘলোকে ভেসে উল্লাসে সেদিকে
পাড়ি দিতে।
প্রিয়তমা,ভাবি মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে
ভুলে যায় এই প্রকৃতির স্নেহ-ভালোবাসা।
তার অবদানকে ভুলে তার নিধন যজ্ঞে
মাতে অপরিণামদর্শিতায়।
ভাবো একবার,বছর চার আগেকার কথা,
মনে পড়ে প্রকৃতির ভালোবাসার সত্যতা?
সারা সপ্তাহ কাজে কর্মে ব্যাপক ব্যস্ততার
পরে ছুটির রোববার আমি ঢলে পড়তাম
ক্লান্তিতে।তখন খুব ইচ্ছা হতো দেহ মনের
জমানো সব কষ্টগুলোকে পলাশের আগুনে
পুড়িয়ে দিতে।
ফাগুন মাস।মনের সেই ক্লান্তিগুলো করলো
হাঁসফাঁস।প্রহর গোনার হলো অবসান।ছুটি
নিয়ে ট্রেনে চেপে বসে দুজনে পৌঁছে গেছি
পুরুলিয়ায়।পাহাড় ও বনে-জঙ্গলে দুজনের
একত্রে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।সে সময় বাতাসে
ছিল মহুয়া ফলের গন্ধের মাদকতা।
আবেগী একটা ঢেউ এসে দুজনকে ভাসিয়ে
নিয়ে গেল বহুদূরে।দীর্ঘ দিনের পোষা স্বপ্ন
গুলো ডানা মেললো উল্লাসে।স্বপ্নের বিচরণ
দেখে নব-শিহরণে দুলেছিলে শেষে।
প্রিয়তমা,আজ দেউলিয়া মনটা খুঁজছে সেই
নিরাবরণ স্বপ্নকে।দেখছি সব শেষ।করোনা
ভাইরাসকে নিয়ে লক ডাউনের অপরিণত
সিদ্ধান্ত অগণিত পরিযায়ী শ্রমিকের জীবনে  
ঢেকে আনলো বিভীষিকা।
হঠাৎ-ই যেন গগন-ভেদী বিদ্যুতের ঝলক
এসে বিঁধলো মগজে।ক্ষণিকে উধাও হচ্ছে
তাদের সুদীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের সব রাগ
অনুরাগ।চারদিকে উঠছে কালবৈশাখী ঝড়,
ভাঙ্গছে বহু বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা।
প্রিয়তমা,দেখছি শত শত পরিযায়ী শ্রমিক
রেললাইন ধরে চলছে ঘরের দিকে।আমিও
আজ এগোবো তাদের সাথে।রাখছি এখন।
আবার কথা হবে,পরে।
                                      ইতি
                               তোমার প্রাণেশ্বর