জেনেছি পুরাণ ঘেঁটে
দেবাদিদেব শিব করলেন এ কী কাণ্ড?
অবাক করার বিষয়। রম্ভা সুরের পুত্র  
মহিষাসুর দীর্ঘসময় তাঁর আরাধনা
করলো বলে শিবও সন্তুষ্ট হলেন।
এযাবৎ ঠিক আছে। বলার ও কিছুই
থাকে না।
তবে ভেবে ও পাই না কুল কিনারা,
তাই বলে কি তাকে দিতে হবে সেই
অমরত্ব বর? শিবঠাকুরের মতিগতি,
সেও বোঝা দুষ্কর।
জেনেছি শিব সে কাজ করে বসলেন।
তারপর পরিস্থিতি হলো খুবই গুরুতর।
মহিষাসুর, সে তো তখন একেবারেই
অপ্রতিরোধ্য।
ধরাকে সরাজ্ঞান করতে শুরু করলো।
মানুষ তো কোন ছাড়। তার আক্রমণ
প্রতিহত করা দেবতাদেরও ছিল নাকি
অসাধ্য ব্যাপার।
এমন বর পেলে সে কি আর চুপ করে
থাকতে পারে? দেব-দেবীদের নাকি
স্বর্গ থেকে বিতারিত করে ছাড়লো।
তারপর? দেব-দেবীদের দুর্দশা চরমে।
তাঁরা খুঁজলো সে দুর্দশা থেকে তাঁদের
পরিত্রানের উপায়?
ভাবলো, তাঁরা করবে কী? দেবাদিদেব
শিবের দ্বারস্থ না-হয়ে আর উপায় কি?
সকলে মিলে পৌঁছে গেলো তাঁর কাছে।
জানালো তাঁকে তাঁদের দুর্দশার কথা।
শিব সেসব শুনলেই ক্রুদ্ধ হবেন এটাই
ঘটনা। হলোও তাই! তাঁর অলৌকিক
শক্তি কম আছে নাকি?
জেনেছি, তাঁর তৃতীয় নয়ন থেকে সেই
শক্তির তেজে তখন জন্ম নিলো নারীর
অবয়বে দশভুজা দেবী দুর্গা। দেবতারা
তাঁদের শক্তির কিছু অংশও তাঁকে দান
করলো।
ভাবলো সব দেব-দেবীরা, হয়তো খুঁজে
পাওয়া গেল এই মহিষাসুরের অত্যাচার
থেকে পরিত্রাণের উপায়।
তারপর? দেবী সবিস্তারে সব ঘটনাবলী
জেনে কি চুপ আর করে থাকতে পারেন?
দুর্গতিনাশিনী দেবী দশ হাতে অস্ত্র ধারণ
করে চেপে বসলেন সিংহের পিঠে।
মহিষাসুরকে আক্রমণ করলেন। ভাবছো,
তাকে বধ করতে পারলেন কি?
অবশ্যই, মহিষাসুরকে বধ না-করে থেমে
থাকতে পারেন কি? তাকে বধ করে দেবী
দেবদেবীদের স্বর্গরাজ্য ফিরিয়ে দিলেন।
কিন্তু ধরাধামের অবস্থা? জেনেছি রামায়ণ
থেকে রামচন্দ্র বনবাসের সময় থেকেই
রাবনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। তাকে বধ করা
তাঁর পক্ষেও সহজ নাকি? ভয়, কী জানি কি
হয়?
ভাবলেন, এ যুদ্ধের আগে দেবীর আশীর্বাদ
নেওয়া দরকার। তাই দেবীর অকালবোধন
না-করে আর ছিল কী উপায়?
সে কাজ করলেন। দেবীর আশীর্বাদ পেয়ে
যুদ্ধ। রাবনকে বধও করলেন।
কিন্তু তারপরও এ ধরাধামে অসুরদের খুব
বাড়বাড়ন্ত। এখনও তাদের রোখে কে?
শুনেছি উমা এলেন কৈলাশ থেকেই মর্তে,
শক্তিরুপিনী হয়ে। এ অসুরদের অত্যাচার
থেকে মুক্তিকামী বহু মানুষ করলো তাঁর
আরাধনা।
ভাবনা একটাই, যদি এ অসুরদের থেকে  
ধরনীকে মুক্ত করা যায়।
দেবীর বোধনের সময় থেকে কেটে গেল
নবমী।আজ বিজয়া দশমী। দেবী ফিরবেন
পতি গৃহে।
আমিও করেছি তাঁর আরাধনা। ভাগ্যের
বিড়ম্বনা। হয়তো সেই ডাকে দেবী সন্তুষ্ট
হননি। পাইনি তাঁর দেখা। হয় তো সেটি
আমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার।
ব্যর্থতা আরও। পুজামণ্ডবে মণ্ডবে তন্নতন্ন  
করে খুঁজেছি তাঁকে। এখনো পাইনি তাঁর
হদিস। দর্শন অনুভূতি হয়তো জাগেনি।
কোথাও তাঁকে খুঁজে না পাওয়ায় তাঁকে
আর অঞ্জলি দেবো কি? সেও হলো না।