ফেসবুকের বদৌলতে টাইমলাইন বা বিভিন্ন সাহিত্য গ্রুপে অহরহই কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী লেখক-লেখিকাদের নানা রঙের এবং ঢংয়ের বিচিত্র সব পোষ্ট ও লেখা চোখে পড়ে। কিন্তু আমাকে বিনয়ী হয়ে অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে হাতেগুনা গুটিকয়েক লেখক-লেখিকা ছাড়া বেশিরভাগের লেখার সাহিত্যমান খুবই নিম্নমানের এবং একঘেয়ে। তারা একই কনসেপ্টের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না যার ফলে কয়েক লাইন পড়েই অনুমান করা যায় এর পরে লেখক কি বলতে যাচ্ছেন। এদের মাঝে কেউ কেউ গোজামিল দিয়ে দু'চার লাইন লিখেই ভাবেন এই বুঝি আমি কবি হয়ে গেলাম! যারা কমেন্ট বক্সে প্রশংসার ফুলঝুরি দেখে গদগদ হয়ে যান তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, বেশিরভাগ মন্তব্যকারী আপনার লেখায় মন্তব্য করেন এই আশায় যে পরবর্তীতে তাদের লেখায় বা পোষ্টে আপনিও ইতিবাচক মন্তব্য করবেন! উৎসাহের জন্য প্রশংসার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। তবে যেখানে চাটুকারিতা ধর্ম, তৈল মর্দন শিল্পের পর্যায়ে চলে গেছে সেখানে সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষী খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর। জাতিগত ভাবেই আমরা তৈল দিতে ও নিতে অর্থাৎ তোষামোদি বড্ড পছন্দ করি তার প্রমাণ এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কমেন্ট বক্সেও মেলে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অনেকে পুরো লেখাটি না পড়েই মন্তব্য করে ফেলেন, "অসাধারণ", " খুব সুন্দর ", " নাইস, কেমনে পারেন ভাই এতো কিউট করে লিখতে?! "। অনেকেই আরো একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেন, " জোশ লিখছেন ভাই, আপনার মাঝেই আমি নজরুল- হুমায়ুনের ছায়া দেখতে পাচ্ছি।" এরকম হাজারো তৈলময় মন্তব্য দেখে চেতন বা অবচেতন মনে অনেকে নিজেকে বিশাল মাপের লেখক ভাবতে শুরু করেন। যার ফলে মাটিতে তাদের পা পড়ে না এবং পরবর্তীতে তারাই হয়ে উঠেন বিখ্যাত ফেসবুক সেলেব্রেটি। কিন্তু আদতে তারা " বাহিরে ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট" এই প্রবাদটির জলজ্যান্ত উদাহরণ মাত্র। এইসব লাইক ভিখারী কমেন্ট শিকারিদের যতই এড়িয়ে যাবেন ততই নিজের মঙ্গল।


আমি খেয়াল করে দেখলাম বর্তমান লেখক-লেখিকাদের পাঠ পরিধি খুবই নগন্য। একজন সচেতন পাঠক অথবা পাঠিকা একটি লেখার দু-চার লাইন পড়ে অনায়াসেই বলে দিতে পারবেন এই লেখকের সাহিত্য জ্ঞান কতটুকু। মনে রাখা জরুরী একজন ভালো লেখক হতে অবশ্যই আগে ভালো পাঠক হতে হবে। এক পৃষ্ঠা লেখার আগে একহাজার পৃষ্ঠা পড়ুন। তারপর দেখুন আপনার লেখার সাহিত্য মান ধীরে ধীরে কোথায় গিয়ে পৌঁছায়।
অনেকেই আবার নিদিষ্ট কিছু লেখকের বই ছাড়া অন্য কোন লেখকের বই পড়তে চান না। এটা করাও অনুচিত বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। প্রায় প্রত্যেক বিখ্যাত লেখকের অসাধারণ কিছু বই থাকে। অন্তত তাদের সেইসব বইগুলো পড়তে পারেন। তাহলে বিভিন্ন লেখকদের বিভিন্ন লিখনশৈলী সম্পর্কে অবহিত হতে পারবেন। এতে করে আপনার নির্দিষ্ট কোন লেখককে অনুকরণ করে লেখার প্রবণতার কমে যাবে এবং এক সময় নিজেই হয়তো স্বকীয়তা ধরে রাখার জন্য নিজস্ব একটা স্টাইল তৈরী করে ফেলতে পারবেন। সর্বদা লেখার কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটির ব্যাপারটা মাথায় রাখা উচিত।


শাহ্জাদা আল -হাবীব
২৪.০৮.২০১৮