আমি আলেকজান্ডার, তুমি তরবারি,
তুমি আলেকজান্দ্রিয়ায় পুড়ে যাওয়া শত শত বইয়ের ছাই;
লাশ হয়ে পরে থাকে না বই,
শকুনিরা ভীড় করে না;
সারা বাতাসে ছড়িয়ে যায় বই পোড়ার গন্ধ।
তুমি ইতিহাস সৃষ্টি করা নব মহাকাব্য।
ওরা তুষার, তুমি হিমালয়;
এন্টার্কটিকা থেকে তিব্বত,
অাবার জাপানে, তুমি প্রথম ভোরের আলো,
তুমি জননী ওরা মানব,
তুমি মানবের জন্মভূমি।
তাজ থেকে রোম
আবার ফিরে এসে সাহারায়
তারপরে দিগন্তে
তুমি বিস্তৃত মরীচিকা?
দিল্লিতে মোঘল, মমির দেশে ফারুক,
চার রাজা হরা, রুই, ইস্কা, চিড়ি!
শেষে গিয়ে মহারাণী,
তুমি জগতের সম্রাজ্ঞী।


বৈশাখে আসে ঝড়, আসে তান্ডব
মানুষ হাত ধরে পালায়;
স্নান করে গাছ,
আমি ঝড় থামার সময় গুনি,
তুমি নিয়ে আসো শান্তি।
বৃষ্টির শেষে,
আকাশে জড়ো হয় নক্ষত্র ;
ঝিকিমিকি করে,
জোনাকিরা আলো জ্বালে,
ঝিঁ ঝিঁ পোকা কথা বলে,
আমি সোম, তুমি ছড়ানো জোৎস্না।
আলো, তেজ আর জ্যোতি,
তুমি ভক্তি, তুমি শক্তি;
তুমি স্তব, মালা আর স্তুতি,
আমিই মানবের মুক্তি!
তুমি চিরসুখ!
মানবের হৃদয়, কেন আসে ক্ষোভ?
পরাজয় থেকে ক্ষোভ,
ক্ষোভ থেকে ভ্রম,
তারপর আসে চাঞ্চল্য,
জন্ম নেয় হিংসা,
আসে বিবেকের দংশন,
আমি ক্ষোভের বিনাশ,
তুমি আমার বিশ্বাস।


বৃন্দাবন থেকে জেরুজালেম,
তুমি মানবের বিশ্বাস।


জীবনের এক পিঠে সংযম ;
আরেকটিতে পরিশ্রম,
তুমি মানুষের অন্তরের সংযম;
পেত্রা থেকে কৈলাস,
আমি শিল্পী, তুমি আমার পরিশ্রম।


এ পাড়ে ভাগীরথী, পুর্বে আরাকাওয়া,
সেই দূরে কঙ্গো,
ঘুরে আসি গঙ্গায়,
সেখানে স্নান করে কত নারী;
বারবার জন্ম নেয় না সতী!
আমি অম্বু, তুমি ত্রিবেণীর যোগে লুকায়িত গুপ্ত সরস্বতী।
তুমি ছিলে,
হরপ্পা থেকে মহেঞ্জোদারো,
সিন্ধু ছেড়ে গিয়ে ব্যাবিলন,
একে একে গড়ে উঠা নগরসভ্যতায়,
এন্টার্কটিকার বরফের প্রান্তে,
কখনো প্রশান্তের গভীরে,
উড়ে গিয়ে অ্যামাজনে অন্ধকারে,
আবার এসে বাংলায়,
ছিলে ফিরিঙ্গির কবিগানে,
ছিলে মহাভারতের মহা দানে,
হ্যামলেটের মঞ্চে, তুমি ছিলে;


মুখে মুখে গাওয়া বাংলার লোকগানে;
চর্যাপদ থেকে অ্যাংলোয়,
তিলোত্তমা থেকে করসায়ার,
ভিনসেন্ট থেকে গ্রাম বাংলার নকশী কাঁথায়
তুমি ছিলে;
তুমি জন্ম নেও রেনেসায়।
চারিদিকে ছড়ানো শিল্প!
আমি মফস্বলি গোপন শিল্পী, তুমি বাস্তবিক প্রেরণা।
শিল্প রয়ে যায়, মানুষের মৃত্যু হয়,
তারা নবরুপে আসে মাতৃক্রোড়ে,
কখনো যশোদা, কখনো মেরী!
আবর্জনার পাশ ধরে গড়ে উঠা বস্তির ভাঙা গড়ে অন্তঃসত্তা হয় রুগ্ন ভিখারিনী,
মানবেরা সন্তান, তুমি জননী।
তুমি ছিলে; বিষাদ সিন্ধুর ময়দানে
বিংশতে দানবিক বোমার গন্ধে তুমি ছিলে;
তুমি সব দেখেছ!


তুমি প্রেম, করুনা আর কৃপা!
আমি মোহ, তুমি ব্রহ্মান্ডের মোহিনী।
তুমি সাধনা আর
সময়ের লক্ষণরেখার বাইরে
আমার আরাধনা।