চোখ মেলে সামনে সৌন্দর্য দেখি-
অনড়, সুস্পষ্ট নিহারিকার
সর্পিল কিনারায় অগ্নিশিখা।
অবাক হয়ে দেখি-
নির্বিকার বকুল ভূপতিত,
শিশিরেসিক্ত শিমুলশাখা,
রক্তিম শাপলার আর্দ্রতা।


দেখতে পেলাম চাঁদের পাহাড়,
সাগরের ঢেউ, খেয়া পারাপার,
হুতুমের শুধু চেয়ে থাকা।
আমার চোখে আমি দেখি-
দোয়েলের নাচ, কুমোরের ছাঁচ,
তার হাতে পুতুলের গড়ে ওঠা।
আমার সামনে দেখা: মাঝনদীতে
মাঝির হাতে ইলিশের ঝলক,
উঠোনে হাঁসগুলোর হেঁটে যাওয়া,
কুড়িয়ে পাওয়া সারসের পালক,
মালতীর ঝরে যাওয়া, শত ঝিঙেফুল,
চুন খসে পড়া কুঠিবাড়ি যাওয়া।
চোখে ধরা পড়া বিকেলের রোদ,
তাতে চেয়ে থাকা ঝলমলে চোখ।
অক্ষিপটে, সন্দিগ্ধ বিড়ালের খেদ;
কাঠবিড়ালির দৌড়, চলাচল, জেদ।
মেলে থাকা চোখে: পার্কে বসা শিশু,
সেজেগুজে ছটফটে বালিকা-বালক,
তাদেরই কারো মাথায় গুঁজে রাখা
রঙিন ময়ূরীর ঝরা এক পালক,
একতারার কম্পন, উল্কার ছুটে যাওয়া,
কোনো বিচ্ছেদ, কোনো ফিরে পাওয়া...


আরো দেখলাম চড়ুইয়ের ঘর,
অশনিসংকেত - ঝড়ো হাওয়া,
ঘৃণাতুর অভিমানী পর
শত্রুর আপন হয়ে যাওয়া,
কুয়াশার মেঘ, শিশিরবিন্দু,
ঝিকমিকে জল, সুপারির গাছ
সাদা শতদল, শিশুদের সাজ
সরষেক্ষেত্র, হলদে সিন্ধু...
আর মেঘমালা সরে যাওয়া।


দৃষ্টির ব্যবধিতে: একই ডালে বসা দুটি পাখি,
আমার বাগানে ফোঁটা একমাত্র গোলাপটি,
চোখে ধরা দেয় ছোট্ট শিশুর উজ্জ্বল হাসিমুখ,
মনে পড়ে সেই বাল্যের স্মৃতি, সবটাই তার সুখ।
চোখে পড়ে যায় রঙ্গনে বসা নিশ্চুপ প্রজাপতি,
শরতের রাতে চেয়ে দেখা ঐ কালপুরুষের জ্যোতি।
সামনে চোখ মেলে এসবের সবই মনে পড়ে যায়,
একটি পলকে লক্ষটি স্মৃতি কীভাবে যে ঠাই পায়!


চোখের পলক নামে...
উথালপাতাল হয়ে যাওয়া হৃদয়...


** ***** ****** ***** **
মনেরই কমলে বিদ্ধ এখন সৌন্দর্যের শূল,
হেতু-অহেতুক, মনে ব্যথা কই, কেমন সে ব্যাকুল?


নতুন পলকে চোখে পড়ে এই ব্রহ্মাণ্ডের শুরু,
সহসা আমি দেখি চোখে কোনো ধ্বংসের প্রতিভূ।
বৃদ্ধের ঐ জিরজিরে হাড়, ঠাণ্ডায় কেঁপে ওঠা,
একটি কুলির খেটে পাওয়া দাম, কপালের ভিজে ওঠা,
শির-মস্তক অবনত ঘাড়ে, কৃষকের বসে থাকা,
শ্রমিকের ঐ শক্ত দুহাত, কপালের বলিরেখা।
গত শতবছরের দেখা শত হাজারো রক্তপাত,
ভীত গৃহিণীর ঘরে আবারো লুটেরাদের করাঘাত,
ডানা ভেঙে যাওয়া শালিকের হেঁটে চলা,
যন্ত্রণায় থাকা এক বন্দির শেষ সত্য বলা:
"প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।"
ধরা দেয় দেখি নরক অগ্নি চোখের সামনে এসে,
পাপের বোঝাটি বেশি হলো হায়, কী যেন ভালোবেসে!