প্রিয়তমা,
এই ছুটন্ত এসএমএস আর তোমার সর্ব ব্যস্ততার যুগে আমি যে তোমাকে সেকেলে চিঠির মত সুদীর্ঘ লিখি জানি না তুমি তা পড়ো কি না। তবুও লিখি; তোমার কাছে যে আমার লিখতে খুব ভালো লাগে। খোঁজ পাইনি অনেক দিন তোমার সোস্যাল মিডিয়ায়, ভৌগোলিক দূরত্বও কম নয়, তোমার নামে খোঁজ করলে অন্য আরেক জনের প্রফাইল ভেসে উঠতো; বোধ করি ব্লক করেছিলে আমাকে। অনেক দিন চলে গেছে তারপর, তোমার প্রফাইল ইদানিং বন্ধু সংযোগের দেয়ালে সবার উপরে উঠে এসেছে; ব্লক থেকে হয়তোবা ডালা খুলে দিয়েছ তবে বন্ধুর তালিকা থেকে আমি বাদ পড়ে গেছি। তা থেকেই ত স্পষ্ট আমাকে তোমার পছন্দ নয়— তা আমি জানি। আমাদের দুটো হৃদয়ের মিল বা সন্ধিক্ষণ আদৌ কভু ছিল না; ছিল আমার এক পাক্ষিক সত্য। সে সত্য গঠিত হয়েছিল তোমার মাধুর্যময় কণ্ঠ শুনার পর, হাস্যোজ্জ্বল চাঁদমুখ দেখার পর, প্রীতিসরলতা আর অমায়িক বিনয় দেখার পর।


কাউকে ছোট্টবেলা থেকেই ভালোবাস কি না তা আমি জানি না, তবে জীবনে প্রথম তোমাকে যে চিঠি লিখেছিলাম তা হয়তো ভুল আমি জেনেছি আর আজীবন সেই ভুলটিই করে যাব— ভালোবেসে যাব নীরবে নিঃশব্দে; তুমি অন্য কাউকে ভালোবাস আর নাইবা বাস আমার কিচ্ছু যায়-আসে না; আমি তোমাকে ভালোবাসি আর আজীবন বাসব। যদি অন্য আরেক জনকে বিয়েও করো তবু তোমাকে ভালোবাসব। পরকিয়া নয়— স্বীকৃতি বিরহিত বিশুদ্ধতম এক পাক্ষিক প্রেম। জীবনের শেষ পর্যন্ত তোমার জন্যে অপেক্ষা করব; যে অপেক্ষার কোনো উদ্দেশ্য নেই, কারণ বিহীন উদ্দাম জুটি আঁখি চেয়ে রবে। সিনেমা জগতের নেকামো যদি ভেবেছ ত ভুল; মনের অন্তস্থঃতলে যা অনুভব করেছি তা-ই হুবহু বহিঃপ্রকাশ করছি। এ কোনো মেকি প্রলাপ নয়— নিতান্ত সাধারণ একটা মানুষের মধ্যে প্রেমের যে টান-বেদনা-আকুলতা আছে তারই অনুবিবরণ ভেবে নিও।


ধরো তুমি আমাকে কখনও বাহুডোড়ে ডাকলে না কাছে; বিয়ে করলে ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে তোমরা দুজন। তারপর এক পা দু'পা করে নতুন অতিথি যখন "মা" বলে ডাকবে তোমাকে আর "বাবা" বলে ডাকবে তোমার বরকে আমি তখনও দূর থেকে তোমাকে আবছা কুয়াশায় দেখব। ভালোবাসব তখনও জেনে রেখো। কাছে যাবার অধিকার আমার থাকবে না কিন্তু তোমার সুখ সুদূর থেকে নীরবে নিঃশব্দে অবলোকনের সুযোগ দিও, আনন্দ-বেদনা অনুভব করতে দিও।


খুব তাড়াতাড়ি কখন যে যৌবন মহাকালমাঝে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে সুচতুর! তারপর তোমাদের হবে মধ্য বয়েস। আমার প্রিয়তমাকে দেখব এক সংসারী নারী। সংসার আর সন্তান সামলাতেই তোমার তখন দিন কেটে যাবে। কিশোর বয়সে এক তরুণ এই আমি যে তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসতাম তোমার হয়তো তখন একটুও মনে পড়বে না; মনে পড়বেই বা কেন! তুমি ত আমাকে কখনও ভালোই বাসতে না! জেনে রাখো সেই মধ্যবয়েসে তখনও আমি তোমাকে ভালোবাসব। সায়াহ্নে বাড়ন্ত শিশুর মুখ চেয়ে ঘর-সংসারের সমস্ত বাধা আর দিবাগত ক্লান্তি যখন মুছে দিতে চাইবে তখন আমিও তোমাদের সন্তানের মুখ দূর থেকে অবলোকন করে মঙ্গলকামনা করব।


তারও পরে তোমরা বৃদ্ধ হবে— আমিও হবো; আমরা সবাই একদিন বৃদ্ধ হবো। তোমার সঙ্গে হাতেহাত ধরে  একসাথে বুড়ো হবার সিন্ধুস্পৃহা আমার অপূর্ণ থেকে যাবে— বুড়ো হবো একাকী নীরবে নিভৃতে। তখন নাতি-নাতনিদের বুলিতে মুখরিত জীবন তোমার। সেই দৃশ্যপট দেখেই আমিও সুখে মৃদু হাসব, নস্টালজিয়া নাড়া দেবে মনে— যে কিশোরীকে জীবনের প্রথম  ভালো বেসেছিলাম সে আজ বৃদ্ধা এক নারী; জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে বৃদ্ধবয়েস পর্যন্ত ভালোবাসার মানুষকে না পেয়েও ভালোবেসে যাওয়া বোধহয় খুব কষ্টের! তখন মনে পড়বে এই ক'খানা চিঠি আমি তোমাকে লিখেছিলাম কী ভীষণ আবেগ নিয়ে। তোমাকে ছাড়া এখন যেমন হাহাকার করে উঠে মন মর্মে তখন জীবনীসন্ধ্যেবেলা জানি না হাহাকার করব কি না! বৃদ্ধ বয়সেও ভালোবাসা কমবে না জানি— তবে আবেগ বাস্তবতার দহনে পিছলে কপোকাত হয়ে নিচে পড়ে রবে কি না জানি না।


আমি জানিনে তরুণীর হৃদয়তল কীরূপে স্পর্শ করতে হয়; জানিনে কীভাবে নারীর অন্তঃস্থল জয় লাভ করতে হয়— শুধু জানি আমি ভালোবেসেছি আর এটাই সত্য। আমি সুপুরুষ নই— জানিনে আমাকে জীবনে কখনও ভালোবাসবে কি না! কিন্তু আশা নিয়ে বাঁচতে হয়! আশা নিয়েই বিপ্লব হয়, সংগ্রাম হয়, প্রেম হয়, ভালোবাসা হয়, বেঁচে থাকা হয়। ভালোবাসার ঐ আশা নিয়েই দু'সহস্র একবিংশ বছরটা কাটাতে  চাই, বাঁচতে চাই। নতুন বছর তোমারও সুন্দর আশা আর সুস্থ জীবনে ভরে উঠুক — এই মঙ্গলকামনা করি। পুরনো গ্লানি জরা জীর্ণতা সবকিছু মুছে যাক, শুরু হোক  উজ্জ্বল রঙিন সুখ মাধুরি মাখা নতুন বছর।


ইতি,
তোমার উপেক্ষিত একজন


০১/০১/২০২১