প্রিয়তমা,
বাসন্তিক হিমেলানিলে খুব সকাল ঘুম থেকে উঠেছ কোনোদিন দূর-অদূর থেকে বাসন্তী কোকিলের আবছায়া ধ্রুব সুর শুনে? হয়তো উপভোগ করেছ শুনে, উঠোনি! হয়তোবা উঠেছো কোন একদিন! সেই প্রাঞ্জল সুরেরই লাবণ্যে  শুরুতে শুভেচ্ছার তোরণ দিলেম; এটা শুরু না সংক্রান্তি! তা তথাকথিত  ইশ্বর জানে আর জানে অব্যক্ত একটা বুক।


আমি জানি— তুমি আমায় বড় বলে শ্রদ্ধা করো, আমিও তোমায় ছোটো বলে স্নেহ করি। তাই ভালোবাসা অব্যক্ত রেখেছি বছরের  একটা বয়েস।  কিন্তু আজ আর না বলে পারলেম না,  জলাঞ্জলি দিলেম লজ্জার। বিগত বছর যবে আমাদের গাঁয়ে এলে অকৃত্রিম চিরসবুজ ঋতুরাজের এমন দিনে, তখন অনুভব করেছিলেম-
"তুমিতো তাই
আমার বুকের পলিল অববাহিকায়,
যে প্রথম নগ্ন পায়
ছাঁপ রেখে হেঁটে যায়। "


তোমার চন্দ্রমুখ আর কমলাক্ষ আমি দেখেছি, দেখেছি মধ্যবিত্তের শিল্পখচিত  মুক্তঝরা হাসি। সেগুলো খুব অনুভব করি তোমার ফিরে যাওয়ার  পর থেকে। তখন অনুভব করলেম ...  
"তার কপোলে একটা গাঢ় তিল আছে ।
ঐ কাজলকালো তিলের নৌকোটা
লাঙলের মতো বুকের ডাঙা খুঁড়ে চলে !
খুঁড়ে চলুক আরও কিছুটা দিন ।
ক্ষত যত গভীর হবে, ভালবাসাও গভীর হবে ।"


কার কাছ থেকে যেনো খবর পেলেম ময়মনসিংহে কলেজ করছ , সেখানে খুঁজলেম অসীম আশা নিয়ে, অব্যর্থ হলেম না। শেরপুরে এক বন্ধুর বাড়িতে থেকে টানা চারটে দিন ময়রমনগর পর্যন্ত গেলেম,  তবে তোমাদের বাড়িটি অনাবিষ্কৃত রইলো। তখন...
"কষ্টগুলো মাপতে মাপতে হিমালয় পেড়িয়ে গেছি !
তোমার সাগর চোখে প্রথম যেদিন স্নান করেছিল আমার দৃষ্টিরা ,
তখন থেকেই কষ্টেরা নিত্য যাওয়া-আসা শুরু করেছিল ।"


অস্ফুট অনেক কথা আমার কাজে–চিন্তায়–চেতনায় ছাপ ফেলেছে…
"খুবই চেনা একজন ।
কিভাবে যে নেপথ্য প্রেমের ইশতেহারটা দেব বুঝতে পারছিনা !
জীবনের প্রথম প্রেমাঞ্জলি  যদি ফিরিয়ে দেয় , লজ্জা পাব ।
আমি হয়তো ভেঙেই যাব !
আর আমার চেয়ে বেশি ভাঙবে
বিন্দু বিন্দু করে গড়ে তোলা নিশাচর অনুভূতীরা ।"


দৈন্য, ভীরুতা, লাজুকতা আর ভয়ংকর মুখাবয়বের জন্যে ভালোবাসি বলতে সাহস পাইনি কোনোদিন। কিন্তু আজ বলে দিলেম, "ভালোবাসি,  ভালোবাসি,  ভালোবাসি ।" বিশ্বাস করো,  আমি চু-সিগারেট কোনটাই খাইনে— এ নিয়ে আমি গর্বিত, গাঁয়ের সবাই জানে! তোমার আবেদনময় প্রেমাঞ্জলি ইস্তেহার দেবার  মতো সাহস আমার ছিল না,  তাই আজ চু খেয়ে প্যারাট্রুপারের মতো বৈতালিক সাহস বাড়িয়েছি.... "প্রিয়তমা,  তোমাকে ভালোবাসি,  এ জীবন ভর ভালোবাসবো"— এ এক শ্রেষ্ঠ  ধ্যান,  ইদানিং জীবনের ধুয়ো।

মুখে ভালোবাসি বললেই কি আর ভালোবাসা হয়! ভালোবাসা অনুভূতির। আমার এই  বিশেষ অনুভব শুধু তোমার জন্যে প্রতুল বিভোর,  ভীষণ রকম। এমন ভেঙেচুরে কেউ ভালোবাসবে না কোনোদিন।


মন যাকে তাকে দেওয়ার নয়— এ আমি জানি। তবুও যদি মনে করো এ মনের অনুভূতি তোমাকে আমি দিতে পারবো চিরকাল চিরসবুজে; তুমিও পারবে আমায়, কমলকোমল হাতটা বাড়িয়ে দিও; আজন্ম চলবো পথ ট্রেনের সমান্তরাল দুটো লাইনের মতো। দেবে কি?


বিয়েতেতো দুজনেরই মত প্রভাবিত করে আগামী সুখের।  কিন্তু প্রেম হলো আত্মার আত্মীয়, যেখানে সুখের আজন্ম লালিত বেদনার স্বরলিপি, অপর পক্ষের  মত-দ্বিমত আসে-যায় না, তাই আরেকজন ভালো না বাসলেও তাকে ভালোবেসে আজীবন চিরকুমার কিংবা ব্রহ্মচারী  থেকে যায় অনেকেই ।
তোমাকে অপেক্ষার কোন নিমরাজি নেই, পুরোটাই— অপেক্ষার অখণ্ড  আকাশ দেব। একটা বছর পেরোলেম রকমারি উপসর্গ দেখে আরও অনেকটা বছর আমি ঠিক পারবো ।


ইতি,
তোমার উত্তরের প্রতিক্ষায় চিরউন্মাদ