এইযে ভোরের রাস্তাটা একেবারেই কেমন উদাস ফাঁকা।
আলসে জাগা কুসুমের ঠোঁট থেকে উজ্জ্বল আলোর চিরকুট চুরি করে নগরমানব।
সন্তর্পণে হালকা কুয়াশা কেটে কেটে চলে রাশভারী রোদের চিমটি কাটা মিষ্টি লাজুক হিমেল বাতাস।
রিকশা করে বাড়ি ফেরা গতকাল মাঝরাতের দুরন্ত দুই তরুণের আলাপনে-
গাঢ় শীত সুযোগই পায়নি কোন ফাঁকে শরীরে জেঁকে বসে দৃশ্য পালটাবে।
কিশোর রিকশাওয়ালাটা বেশ আমুদে জোরসে জম্পেশ হিন্দি আইটেম গান ছেড়ে-
দিব্যি হাত গজিয়ে নিচ্ছে।
দুপুরের মায়ায় সংজ্ঞাহীন যেন সদা জাগ্রত সরষে ক্ষেতগুলির আজগুবি সব কাকতাড়ুয়ারা।
আড়মোড়া ভেঙ্গে শিশুদের দল উঠে মাঠ পেরিয়ে দ্রুত দৌড়ে ছুটে চলে স্কুলের গন্তব্যে।
শহুরে আমেজে কেন যেন সিক্ত শীত কিছুটা বার্ধক্যের ভারে অবনত।
হাতমুখ থালাবাটি ধুয়ে কাপড় কেচে গ্রাম্য যুবতীরা শরীর ভেজায়-
বহমান নদীর তীর ঘেঁষে নেমে বুক-সমান জলের গভীরে তখন যে মধ্য-প্রহর।
সদ্য বিবাহিতা পাশের গাঁয়ের পরিচিতা সংসারের মানুষটির হাত ধরে-
ঘোমটা মাথায় ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দের গরুর গাড়িতে করে বাড়ি যাচ্ছে।
এ গাঁয়ের সখিরা কাঁখে কলসি নিয়ে মৃদু লাজভরা নয়ন বাঁকিয়ে-
মিহি সুরে অভ্যর্থনা দিয়ে দিলো।
শহরে বুঁদ নাগরিক জীবনে আহা এমন কি দেখা যায়?
গ্রাম যেন মনের পান-সুপারি; খেজুর গাছের কাঁচা মিষ্টি রস,
ধোঁয়া উঠা দাদি-নানির হাতের ভাপা-পুলি পিঠা।
পুকুরের জলে উদ্দাম কিশোর দলের ধুপধাপ ঝাঁপ,
নদীর মাঝির পাখির মতো কণ্ঠে গানের কলিতে সুর।
মাঘের নিরাবরণে বিকেলের কোলে মায়ের চাঁদ-মুখ কন্যার বিদায় বেলায়-
চোখ বেয়ে নামা অশ্রুর ভারে মনের পালকীতে রাত নামে যেন-
বিগত কাটানো দিনের আলোগুলোতে।
কয়েক যুগের বেড়ে উঠা শহরের জালে এমন প্রাণকাড়া লাস্যময়ী রুপ কেন খুঁজে পাই না?
পারি না কেন উদাস হতে; হতে মুগ্ধ শ্রোতা রাখালের খেয়ালি বাঁশির সুরে?
আবদ্ধ যাপিত নাগরিক জীবন থেকে কান পাতলে তাই কি বুঝা যায়-
আমার তোমার মাটির মূল অন্য কোন গ্রহে দূরে বহুদূরে?